‘নানা ভাষা ,নানা মত, নানা পরিধান- বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’- আমাদের দেশের আনুমানিক জনসংখ্যা ১২৮ কোটি। আর উপভাষা ১৮০০ টি। ভাষা ২০০ টির মতো। আমাদের এক দেশের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাকে প্রচুর বৈচিত্র্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও বৈচিত্র্যর মধ্যে ঐক্যও রয়েছে। যার নিদর্শন প্রচুর। বিশেষ করে এমন কিছু আঞ্চলিক উৎসব রয়েছে যার বিস্তার সমস্ত দেশ জুড়ে। যেমন মকর সংক্রান্তি। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি দিন থেকে শুরু হয় মকরসংক্রান্তি ঘিরে গঙ্গাসাগর উৎসব। বাংলায় এই উৎসবের নাম ‘পৌষ সংক্রান্তি’। ওডিশা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশে এই উৎসবের নাম ‘ মকর সংক্রান্তি’। তেমনই, তামিলনাড়ুতে ‘ পোঙ্গাল’ তো গুজরাটে ‘উত্তরায়ণ’। নেপালে এই সময় পালিত হয় ‘মাঘ সংক্রান্তি’। থাইল্যান্ডে পালিত হয় ‘সোংক্রান’। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসব চলে। এই দিনের মাহাত্ম্য হল, রাশি চক্রের বিচারে সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। কিন্তু, আজ থেকে এক হাজার বছর আগে ৩১ শে ডিসেম্বর নাগাদ এই উৎসব শুরু হতো। এক হাজার পর ফেব্রুয়ারি। তিথি অনুযায়ী অশুভ পৌষ মাস শেষ হয়। মাঘের শুরু হয়। মাঘ মাস পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের প্রভাব কমতে থাকে। ‘উত্তরায়ণ’ নাম থেকে প্রমাণ হয় সূর্যের যাত্রা উত্তরের দিকে শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্বে ২২ ও ২৩ শে ডিসেম্বর ‘ইয়ুল্টাইড’ বলে একটি উৎসব পালিত হত। পরে যীশু খৃষ্টের জন্মের পর এই উৎসব বিলুপ্ত হয়ে যায়। শুরু হয় বড়দিনের উৎসব। কিন্তু এই পৌষ মাস কৃষি ক্ষেত্রের জন্য মরা মাস। তাই মরা মাসের আহুতি দিয়ে শুরু হয় নতুন মাসের উদযাপন। এর জন্যই, সংক্রান্তির দিন বা পরের দিন দুধ, গুঁড়, চালের গুঁড়ো ও নারকেল দিয়ে তৈরি হয় পিঠে পুলি, পাটিসাপঠা। বাংলায় যেমন পিঠে হয়। তেমন পাঞ্জাব মহারাষ্ট্রে হয় সুজির হালুয়া, শীতের সবজি দিয়ে খিচুড়ি। তামিলের লোকরা পায়েস দিয়ে শুরু করে নতুন মাসের উৎসব। গুজরাট, কর্নাটকে চলে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। আর বাংলায় আজকের দিনে সবাই পুণ্য স্নানে যায় গঙ্গাসাগরে। মা গঙ্গা আর বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থান হল এই গঙ্গাসাগর। প্রায় ৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপে ভিড় জমে লক্ষ লক্ষ মানুষের। কনকনে ঠাণ্ডাতেও স্নান সারেন বহু মানুষ।
Photo- FTD Travel, Sacred Yatra
Facebook Comments