‘ওঠো,জাগো,লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না’ যুব সমাজের জন্য বিবেকানন্দের এই বাণী যুগসেরা। ১৫৬ টা বছর পার হয়ে গেলেও তাঁর প্রত্যেকটি বাণী আজও সতেজ ও সমৃদ্ধ। উনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু ধর্মগুরু পরমহংসের প্রধান শিষ্য বিবেকানন্দ ছিলেন ভারতের হিন্দু নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামীজি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘ যদি ভারতকে জানতে চাও, তবে বিবেকানন্দের রচনাবলী পড়ো’। ভারতের মত সমৃদ্ধশালী দেশের প্রাণ হলেন বিবেকানন্দ। যিনি কিনা শিকাগো ধর্মসভায় উপস্থিত থেকে পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম সনাতন ধর্মের প্রচার করেন। তাঁর কাছে, ধর্মের অর্থ হল ‘আত্ম-উপলব্ধি’। তিনি বলেছিলেন, ধর্ম হল মানুষকে পশু থেকে মানুষে এবং তারপর মানুষ থেকে দেবতায় রূপান্তরিত করা। এমন স্বাধীন চেতা, তেজস্বী সন্ন্যাসী শুধু মাত্র যুব সমাজের জন্য যে ভেবেছেন তা নয়, নারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ভারতীয় নারীর জাতীয় আদর্শ হল মাতৃত্ব। আমেরিকা প্রসঙ্গে স্বামীজি বলেছিলেন, আধুনিক যুগে আমেরিকা মতো দেশের মেয়েদের স্বাধীনতা থাকলেও, পুরুষ জাতি তাঁদের সৌন্দর্যের নিরিখে বিচার করে। যা অনৈতিক। তিনি একটি পাখির দুটি ডানার সঙ্গে পুরুষ ও নারীর অবস্থান বুঝিয়েছেন। একটি ডানা নিয়ে যেমন একটি পাখি উড়তে পারে না তেমনই নারী ও পুরুষের উভয় ক্ষমতা ছাড়া একটি জীবন ও সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়।
তাঁর কাছে সব প্রাণ ই ব্রহ্মস্বরূপ। তিনি দেখতে শিখিয়েছেন জীবের মধ্যেই শিব রয়েছেন। বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের চিন্তা ধারায়, ‘ শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকাশ’ তেমনই ধর্ম হল ‘ মানুষের মধ্যে থাকা দেবত্বের প্রকাশ’ অর্থাৎ মানুষের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করা। তেজস পুরুষ বিবেকানন্দ ধর্ম, জাতি, শিক্ষা, সম্পর্কে নির্ভীক ও নিরপেক্ষ মানুষ ছিলেন। তিনি নিজে বিশ্বাস রাখতেন না জ্যোতিষে ও প্যারাসাইকলজিতে। তিনি বিশ্বাস রাখতেন, মানুষে। এমন সাত্ত্বিক পণ্ডিত যে শুধু দেশের গৌরব তা নয়, তিনি হলেন ভারতের ঐতিহ্য। ভারত যদি তাঁর পুরনো গৌরব ফিরে পেতে চায় তবে বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে হবে সকলকে। তাঁর কথ্য, ভাষ্য, চেতন, দূরদৃষ্টি, সঙ্কল্প,মেধা, ভক্তি, তেজ, মহানতার আলো ছড়িয়ে পড়ুক ভারত ভূমিতে এই আশা রইল। শুধু মাত্র একটা দিন সমারোহ করে পালন করলেই তাঁকে সন্মান জানানো যায় না। এমন ১২ ই জানুয়ারি যেন বছরের প্রত্যেকটা দিন স্মরণে থাকে এমনই কামনা হোক আমাদের প্রত্যেকের। ভারতের যুব সমাজ ও নারী সমাজ জাগরিত হোক বিবেকানন্দের আদর্শে।
Photo- bibek varati worldpress.com
Facebook Comments