পোষা প্রাণী ভালো লাগে? আপনার নিজের খুব কাছের একটি প্রাণী কি আপনার বাড়ির কুকুর, বিড়াল, খরগোশ বা পাখিটা? অনেকে শখে, কেউ একাকীত্ব থেকে, কেউবা শুধু ভালো লাগা থেকেই প্রাণী পুষে থাকেন। তবে, আপনি যদি মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চান তাহলে এই পোষা প্রাণীটি কিন্তু আপনাকে অসম্ভব সাহায্য করবে। আর এটা এখন কোনো উড়ো কথা নয়, গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত একটি তথ্য।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে করা একটি সমীক্ষায় ওঠে আসে যে, যেসব বয়স্ক মানুষের সাথে কোনো পোষা প্রাণী থাকে, তাদের মানসিক চাপ ও হতাশা অন্যদের চাইতে তুলনামূলকভাবে কম থাকে। যদিও এক্ষেত্রে খানিকটা বাড়তি দায়িত্বও চলে আসে।
তবে পোষা প্রাণী রয়েছে এমন মানুষদের মধ্য থেকে শতকরা ৫৫ শতাংশ মানুষ (৫০-৮০ বছর বয়সের অধিকারী) জানিয়েছেন যে, পোষা প্রাণীদের কারণে তারা শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকেন এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন। নিজেদের বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পেয়েছেন এদের অনেকেই পোষা প্রাণীদের মাধ্যমে।
এই মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই পোষা প্রাণীর সাথে ঘুমোতে পছন্দ করেন। একলা হওয়ার অনুভূতি তখন আর তাদের মধ্যে কাজ করে না। কষ্ট পাওয়া থেকে দূরে যেতেও এই সঙ্গ তাদের সাহায্য করে বলে জানান তারা। তবে এতক্ষণ কিন্তু শুধু বয়স্কদের কথাই বলা হচ্ছিলো। বাস্তবে, পোষা প্রাণীরা শুধু বয়স্কদের জন্যই নয়, সব মানুষের জন্যই মানসিকভাবে স্বাস্থ্যকর একটি আবহাওয়া তৈরি করে।
গবেষণায় জানা যায় যে, বিড়াল পোষেন যারা, তাদের উদ্বিগ্নতাই শুধু কমে আসে না। একইসাথে এই ছোট্ট ব্যাপারটি অনেক সময় তাদের জীবন বাঁচাতেও সাহায্য করে। এ নিয়ে ২০০৯ সালে ‘দ্য জার্নাল অব ভাসকুলার এন্ড ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি’তে একটি লেখা প্রকাশিত হয়।
এই লেখায় দেখানো হয় মোট ৪,০০০ জন মানুষকে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ বিড়াল পুষছিলেন, কিছু মানুষ ছিলেন একা। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার পর দেখা হয় যে, তাদের মৃত্যুর সাথে এই ব্যাপারটির কোনো সংযোগ রয়েছে কিনা। অবাক করা ব্যাপার হলো যে, গবেষণায় উঠে আসে, যেসব মানুষ বিড়াল পুষে থাকেন, তাদের হৃদপিণ্ডজনিত কোনো সমস্যার কারণে মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা কম থাকে।
কীভাবে বিড়াল মানসিক সমস্যা ও চাপ থেকে মানুষকে দূরে থাকে?
গবেষণানুসারে, বিড়ালের কাছে গেলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন করটিসল কমে যায়। ফলে মানসিক চাপও নিজ থেকে কমে আসে। তবে কেবল বিড়াল নয়, কুকুর যারা পোষেন তাদের ক্ষেত্রেও মানসিকভাবে তুলনামূলকভাবে সুস্থ থাকার সুযোগ থাকে।
২০১৭ সালে সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানা যায় যে, কুকুর পোষার ব্যাপারটিও অনেকটা একইরকম শারীরিক ও মানসিক সাহায্য করে থাকে। আর কী কী উপায়ে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে আপনার পোষা প্রাণিটি? চলুন, জেনে নেওয়া যাক-
১। পোষা প্রাণীকে ছোঁয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, গবেষণা জানায় যে, শুধু কোনো পোষা প্রাণীর চারপাশে থাকা এবং তাকে খেলতে দেখলেই আমাদের রক্তচাপ অনেক কমে যায়। উল্লেখ্য, রক্তচাপের সাথে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
২। চিকিৎসকের ঘরে অনেক সময় অ্যাকোরিয়াম রাখা হয়। কেন এমনটা করা হয়? কারণ, কোনো অবস্থায় হৃদপিণ্ডের স্পন্দন ও চাপ কমিয়ে দেয় কোনো প্রাণীর উপস্থিতি। এতে করে রোগীর মানসিক চাপ কমে যায়। বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্যেও এই উপায়টি আপনার জন্য অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে!
৩। খুব কম মানুষকে আপনি খুঁজে পাবেন, যাদের পোষা প্রাণী রয়েছে, অথচ তারা নিজেদেরকে একা বলছেন। পোষা প্রাণী একাকীত্বের হাত থেকে রক্ষা করে।
শারীরিকভাবে কর্মক্ষম হতে চান আরও বেশি? একটু মন খুলে হাসতে চান? পোষা প্রাণী বা পোষ্যর চাইতে ভালো কোনো উপায় আর হতেই পারে না এক্ষেত্রে।
Facebook Comments