সিরিয়ার যে এলাকায় আন্তর্জাতিক সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি আত্মগোপন করেছিলেন সেখানে অভিযান চালিয়ে বিশেষ বাহিনী কীভাবে তাকে হত্যা করেছে তার প্রথম ভিডিও-ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভিডিওটির কিছুটা অস্পষ্ট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যে বাড়িতে আবু বকর আল-বাগদাদি আত্মগোপনে ছিলেন সেই বাড়ির চত্বরে ঢোকার পথ পরিষ্কার করতে সেনারা জঙ্গীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে চালাতে চত্বরের দিকে এগোচ্ছে। আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি অভিযানের মুখে পালিয়ে একটি সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেন। পরে শরীরে বেঁধে রাখা আত্মঘাতী বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটান তিনি। যার ফলে দুই সন্তানসহ সেখানেই মৃত্যু হয় তার। মার্কিন অভিযানের পর ওই চত্বরটি ধ্বংস করে ফেলা হয়। যেখানে গোলাবারুদ মজুত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেন, সেখানে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত করে দেয়ার পর এলাকাটি দেখে মনে হয়েছে সেটি ‘বড় বড় গর্তে ভরা একটি গাড়ি পার্ক করার বিশাল খালি জায়গা।’ তিনি আরও বলেন, সুড়ঙ্গের ভেতর আল-বাগদাদির সঙ্গে মারা যায় দুটি শিশু। এর আগে অবশ্য বলা হয়েছিল সুড়ঙ্গের ভেতর আল-বাগদাদি তিনটি শিশুকে নিয়ে ঢুকেছিলেন এবং তারা তিনজনই বিস্ফোরণে আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে মারা গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় আল-বাগদাদির পালানোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে মৃত্যুর আগে আল-বাগদাদি কাঁদছিলেন, কাতরাচ্ছিলেন। তবে এমন দাবি সেটা সঠিক কিনা তা জেনারেল ম্যাকেঞ্জি নিশ্চিত করতে পারেননি।সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘বাগদাদি তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে একটা সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢোকেন। তারপর সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেন। আর এর মাধ্যমে আপনারা বুঝে নিতে পারেন যে, তিনি কীধরনের মানুষ।’ ট্রাম্প বলেন, ‘ওখানে কী ঘটেছে, সে ব্যাপারে এটা আমার পর্যবেক্ষণ। তার শেষ কয়েকটা মুহূর্ত ঠিক কেমন ছিল সেটা নিশ্চিত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সেই মুহূর্তের কথা আমি বলতে পারব না।’ ম্যাকেঞ্জি বলেন, চারজন নারী যারা আত্মঘাতী ভেস্ট পরেছিলেন, তারা এবং আরও একজন পুরুষ ওই চত্বরে নিহত হয়েছেন। জেনারেল ম্যাকেঞ্জি আরও জানান, মার্কিন হেলিকপ্টারের ওপর গুলি চালানোর পর সংঘর্ষে তাদের বেশ কিছু যোদ্ধা মারা গেছে। তবে সংখ্যা সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বলতে চাই এই অভিযান যেহেতু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই বেসামরিক মানুষের হতাহত হবার আশঙ্কা এড়ানোর এবং ওই ভবন ও চত্বরে যেসব শিশু আছে বলে আমরা সন্দেহ করছিলাম তাদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে।’ জেনারেল ম্যাকেঞ্জি নিশ্চিত করেছেন যে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আইএস নেতার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আল-বাগদাদি ২০০৪ সালে ইরাকের কারাগারে থাকার সময় থেকে তার ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সংরক্ষিত ছিল। তিনি জানান, ‘পরিচয় শনাক্ত করার জন্য আল-বাগদাদির দেহাবশেষ একটি বিশেষভাবে তৈরি ঘাঁটিতে বিমানের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সশস্ত্র সংঘাতে নিহতদের সৎকার বিষয়ক আইন অনুযায়ী তার মৃত্যুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে সমুদ্রে দাফন করা হয়।’
ভিডিও সৌজন্যে : দ্য গার্ডিয়ান
Facebook Comments