বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামীকাল রবিবার (২৮ এপ্রিল) উদ্বোধন করতে চলেছে ‘রেলসেবা’ (Rail Seba) নামের অ্যাপটি। প্রথমবারের মতো এই অ্যাপের মাধ্যমে রেলের টিকিট কাটাসহ ১৫ ধরণের সেবা পাওয়া যাবে।
অ্যাপটিকে প্লে স্টোরে ছাড়া হলেও উদ্বোধনের পরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। অ্যাপটির বাস্তবায়ন করেছে রেলের অনলাইন টিকিটি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ’ (সিএনএসবিডি)।
এই অ্যাপস বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান রেল ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ জানান, প্রথমদিকে কমপক্ষে দশটি সেবা দিয়ে অ্যাপটি চালু করা হবে। যার মধ্যে ট্রেনের টিকিট কাটাই এর প্রধান সেবা হবে।
প্রণব কুমার ঘোষ আরও জানান, বাংলাদেশে আন্তঃনগর রেলে অন্তত প্রতিদিন ৭০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। তবে এই অ্যাাপের মাধ্যমে অর্ধেক যাত্রীই টিকিট কেটে যাতায়াত করতে পারবেন। অর্থাৎ এই অ্যাপের মাধ্যমেই মূল টিকিটের ৫০ ভাগ দেওয়া হবে।
রেলের নতুন এই অ্যাপটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রেজিস্ট্রেশন করে এই অ্যাপে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশের পর সেখান থেকে টিকিট কাটা বা অন্যান্য সেবা ব্যবহার করা যাবে। জানা গেছে, যারা ইতোপূর্বে মোবাইল নাম্বার দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটেছেন অথবা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের আগের পাসওয়ার্ড দিয়েই অ্যাপে ঢুকতে হবে। শুরুতেই প্রথম স্ক্রিনে নয়টি তথ্য দেখা যাবে। যেমন-টিকেট ক্রয়, তথ্য অনুসন্ধান, হিস্ট্রি, ফুড অর্ডার, ট্রেন ট্রেকিং, রেলের কোচ ভিউ, কমেন্ট রেটিং ও কন্ট্রাক্ট অপশন। এখান থেকে দরকারি তথ্য পছন্দ মতো বেছে নেওয়া যাবে।
রেলের অ্যাপ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএসবিডি সূত্র জানায়, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সহজেই একজন যাত্রী এই অ্যাপের মাধ্যমে তার মোবাইল ফোন থেকে টিকিট কাটতে পারবেন।
সিএনএসবিডি সাধারণত চুক্তিভিত্তিকভাবে বাংলাদেশ রেলওয়েকে প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়ে থাকে। তারা এর মাধ্যমে টিকেটিং ব্যবস্থাপনাও করে। তবে বিভিন্ন সময় তাদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি রেলের নিজস্ব লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা চুক্তিতে থাকলেও তারা সেটি করেনি। তাদের বিরুদ্ধে সার্ভার বিকল হয়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ নিতে না পারারও অভিযোগ এসেছে বহুবার।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সিএনএসবিডির সঙ্গে যে চুক্তি হয় সেখানে রেলের নিজস্ব লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। অথচ তারা সেটি করেনি। এছাড়া ২০১২ সালে চুক্তি শেষে বাংলাদেশ রেলওয়ে এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এরপর সিএনএসবিডি প্রায় ছ’মাস মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়। সবশেষে মামলা ওঠানোর জন্য যখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চাপ দেয়, তখন তারা নতুন করে আরও দু’বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। পরে তারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ পায়। সে বছর নতুন করে চুক্তি নবায়ন করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র আরও জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ওই চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা বিশদ বিষয়ে না জেনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
সিএনএসবিডি সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তখন নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে এবং তখন যারা প্রযুক্তিগত সুবিধা ঠিকমতো দিতে পারবে এবং নানা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় যারা দক্ষতা সম্পন্ন প্রমাণিত হবে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিএনএসবিডি প্রায় আড়াই বছরের আরও এক্সটেনশন চাইলেও তারা সাড়া দেয়নি। এরই মধ্যে সিএনএসবিডিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এরপর থেকে এটা সম্ভব নয়।
রেলভবন সূত্র জানায়, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এখনই ১০০ ভাগ টিকিট অনলাইন এবং অ্যাপে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখনই শতভাগ নয় ৫০ ভাগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ। সফলতা পেলে আগামীতে শতভাগ অ্যাপের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
Facebook Comments