৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টলিপাড়ায় এখনো শুরু হল না শ্যুটিং। আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজকদের মধ্যে ঝামেলার জেরে বন্ধ রয়েছে সমস্ত ধারাবাহিকের শ্যুটিং। প্রযোজকদের সাথে আর্টিস্ট ফোরামের শিল্পীরা ইতিমধ্যেই বৈঠকে বসলেও সেই বৈঠক থেকে কোনো সমাধান সুত্র বেরিয়ে আসেনি। আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় গতকাল সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন, খুব দ্রুত যাতে ঝামেলা মিটিয়ে শ্যুটিং শুরু করা যায় সেই চেষ্টা চলছে। এই অবস্থায় টলিপাড়ায় বিভিন্ন সেলেবরা কি বলছেন আসুন দেখে নিই
সায়ন্তনি গুহঠাকুরতা- সায়ন্তনির মতে, সমস্ত প্রফেশনেই একটা সিস্টেম থাকা উচিত। টলিপাড়ায় শ্যুটিং বন্ধ নিয়ে What’s New life কে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকারে সায়ন্তনি জানান, “আমার মনে সব প্রফেশনেই একটা সিস্টেম থাকা উচিত। শিল্পীরা যেই ওভার টাইমের ডিমান্ড করছে সেটা তো অন্যায্য নয়। প্রত্যেকেই তো নিজের ব্যাক্তিগত্ত সময় থেকে ওভার টাইম করে। সমস্ত প্রফেশনেই ওভার টাইমের জন্য আলাদা টাকা দেওয়া হয়। আসলে আমরা বিনোদনের জগতে কাজ করি বলে, সবাই ভাবে আমাদের প্রচুর টাকা। আদতে কিন্তু তা নয়। সবাই তো খুব বড় আর্টিস্ট নয়। তাই আর্টিস্ট ফোরাম যেই ওভার টাইমের জন্য এক্সট্রা টাকার ডিমান্ড করছে তার সাথে আমি সহমত”।
পায়েল চক্রবর্তী- একই মত পায়েলেরও। এই মুহূর্তে ছোটপর্দার থেকে বেশি বড়পর্দাতেই দেখা যাচ্ছে পায়েলকে। তা সত্বেও আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজকদের এই দ্বন্দে পায়েল কিন্তু পাশে রইলেন আর্টিস্ট ফোরামের। পায়েলের মতে, যেভাবে বিভিন্ন ধারাবাহিকগুলোতে শিল্পীদের কলকারখানার মতো খাটানো হচ্ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে আর্টিস্ট ফোরামের এই দাবি একদম যুক্তিসঙ্গত। আজকেও আর্টিস্ট ফোরামের মিটিং ছিল। আমি জ্বরের কারনে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি মনেপ্রানে আর্টিস্ট ফোরামের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত।
অনিন্দ্য ব্যানার্জি – প্রথমে যেটা বলার যে, এই বিষয়টা নিয়ে কিছু অপপ্রচার চলছে। প্রযোজক আর অভিনেতাদের মধ্যে সমস্যার গল্প ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সুচারু ভাবে। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি আসলে এর পেছনের রুপটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। একটা বড় সিস্টেমের খুব ছোট পার্ট আমরা। আমরা সবসময় যদি কে কি পেলাম আর পেলাম না টা নিয়ে হিসেব করতে বসি তাহলে যেই অবস্থাটা এখন আমাদের চারপাশে চলছে এর থেকে ভালো কিছু আমরা করতে পারব না। সোশ্যাল মিডিয়াতে সিরিয়ালকে কেন্দ্র করে নানা বিদ্রুপ করা হচ্ছে। ইতিহাস সাক্ষী আছে, মানুষ যখন কোন সমস্যায় পড়েছে তখন একটা দল সেই সমস্যাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আর অন্য একটা দল তার বিরোধিতা করেছে। এখন আমরা একটা ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই ক্রাইসিসটা কাটিয়ে উঠতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দু-পক্ষকেই নিজেদের ডিমান্ড কিছুটা কমিয়ে আনতে হবে। তবে আমি এটা বলব যে, এই ঘটনাটা আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের কোন ইস্যু নয়। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে যে অচলাবস্থা চলছে, তারই একটা রিফ্লেকশন এই ঘটনা।
অনিন্দিতা সরকার – দেখতে দেখতে প্রায় আট বছর কাটিয়ে ফেললাম এই ইন্ডাস্ট্রিতে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আজকে যেই সময়মত টাকা না পাওয়া নিয়ে এই অচলাবস্থা চলছে ইন্ডাস্ট্রিতে সেই জিনিসটা আমিও মারাত্মক ভাবে ভোগ করেছি। অনেক বড় বড় প্রযোজনা সংস্থার সাথেও কাজ করে আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। কাজ করার সাত মাস পরে টাকা পেয়েছি এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এটাতো আমার প্রফেশন। এই প্রফেশনের ওপরেই আমার জীবিকানির্বাহ হয়। তাই সময়মত টাকা না পেলে আমার সংসারে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কাজের সময় নিয়ে যেই প্রশ্নটা উঠছে সেটা নিয়েও আমার কিছু বলার আছে। সিরিয়াল করতে গিয়ে আমি দেখেছি, আমরা সকাল থেকে সেটে গিয়ে বসে আছি কিন্তু স্ক্রিপ্ট আসছে বিকেল চারটের সময়। সেক্ষেত্রে দোষ টা কার ? অভিনেতা অভিনেত্রীদের নাকি যে স্ক্রিপ্ট লিখছে তার? একজন তিনটে চারটে করে ধারাবাহিকের স্ক্রিপ্ট লিখছে। ফলস্বরূপ সে সময়ে কাজ করে উঠতে পেরে উঠছে না। তার ফল ভুগতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের মূল দাবি দুটো, এক, মাআসের ১৫ তারিখের মধ্যে আগের মাসের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক। দ্বিতীয়ত, দশ ঘণ্টা কাজের পর যদি আরও এক ঘণ্টা কাজ করতে তাহলে সেই এক ঘণ্টার জন্যও নির্দিষ্ট একটা টাকা দেওয়া হোক।
আজ সকালে নজরুল মঞ্চে আর্টিস্ট ফোরামের বৈঠকের পর ফোরামের কার্যকরী সভাপতি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী জানিয়ে দিয়েছেন, শিল্পীরা তাদের সিদ্ধান্ত অনড়। তবে তাড়াতাড়ি যাতে শ্যুটিং শুরু করা যায় সেই চেষ্টাও ফোরাম করছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বুম্বা দা। শ্যুটিং বন্ধের ঘটনায় সিংহভাগ শিল্পীরাই কিন্তু আর্টিস্ট ফোরামের পাশে রয়েছে। আর্টিস্ট ফোরামের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত সকলে। তবে সকলে এটাই চাইছেন যে তাড়াতাড়ি সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে পুনরায় শুরু করা হোক শ্যুটিং। নাহলে আদতে ক্ষতি তো ইন্ডাস্ট্রিরই। তবে শ্যুটিং যে কবে থেকে শুরু হবে সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন তথ্য মেলেনি।
Facebook Comments