“বিক্রি আছে আইফেল টাওয়ার”… হ্যাঁ!! ঠিক এই মর্মে প্রস্তাব গেলো ছয় জন প্রসিদ্ধ পুরোনো লোহা কারবারির কাছে। তবে বর্তমানে নয়, ১৯২৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ফ্রান্স সরকারের যখন আইফেল টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণে নাভিশ্বাস উঠে যায়, তখন।
“ভিক্টর লুসটিগ”, জন্ম অধুনা অস্ট্রিয়াতে ১৮৯০ সালে। বহু ভাষায় দক্ষতা ও বাগ্নিকতার উপর ভরসা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন “Smoothest Con Man Ever Born” হিসাবে। আপনাদের নিশ্চয়ই অভিষেক বচ্চন ও রানি মুখার্জি অভিনীত “বান্টি অউর বাবলি” সিনেমায় তাজমহল বিক্রি করার ঘটনা মনে আছে। এই ভিক্টর লুসটিগ মহাশয় তেমন ভাবে আইফেল টাওয়ার বিক্রয় করেছিলেন, তাও একবার নয় দুইবার।
১৯২৫ সালে খুব গোপনে ওই ছয় ব্যবসায়ীকে প্রসিদ্ধ হোটেল “হোটেল দে ক্রিলন” এ ডেকে নিজেকে ফ্রান্স সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দিয়ে সমস্ত ব্যাপার চূড়ান্ত করে এক বিশাল লিমুসিন গাড়িতে করে টাওয়ার পরিদর্শন করিয়ে আনেন। এরপর শুরু হয় লুসটিগের আসল খেলা। সে প্রথম থেকেই ব্যবসায়ী “আন্দ্রে পোশন” কে নিজের লক্ষ্য করে রাখে, কারণ সেই মুহূর্তে আন্দ্রে ব্যবসা জগতে নিজের নাম প্রতিষ্টিত করতে মরিয়া ছিলো। তবে আন্দ্রের স্ত্রীর কিছু সন্দেহ জাগে কিন্তু তার কাছেও লুসটিগ নিজেকে এক ঘুষখোর সরকারি কর্মচারী হিসাবে উপস্থাপনা করে সন্দেহের উর্ধে চলে যায়। অবশেষে লুসটিগ ও তার সেক্রেটারি আরেক ধূর্ত মানুষ “ড্যান কলিন্স” ভেনিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সুটকেস ভর্তি টাকা, শুধু টাওয়ার বিক্রয়ের নয় তার সাথে ঘুষ হিসাবে উপঢৌকন। আশ্চর্যজনক ভাবে কোনো আলোড়ন হয়না এই ঘটনায়, উল্টে আন্দ্রে প্রচন্ড অপমানিত হয় পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে। এর এক মাস পর আবার একই ভাবে লুসটিগ চেষ্টা করে আইফেল টাওয়ার বিক্রি করার কিন্তু এবারের লক্ষ্যকেন্দ্রে থাকা মানুষটি পুলিশের দ্বারস্থ হয় জাল কাগজপত্র নিয়ে, যদিও সেইসময় লুসটিগ ও তার সঙ্গী কৌশলে পালাতে সফল হয়।
অবশেষে ১৯৩৫ সালে লুসটিগের এক কাছের মানুষের সাহায্যে আইনের নাগালে আসে লুসটিগ। ২০ বছর ক্যালিফোর্নিয়ার “আলকাটরাজ আইল্যান্ড” এ জেলবন্দি থাকে। ১৯৪৭ সালের ১১ই মার্চ দুইদিনের নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এই বিশ্বকাঁপানো ধূর্তশিরোমণি মানুষটি। তবে তার ডেথ সার্টিফিকেটে তাকে উল্লেখ করা হয়েছিলো একজন “শিক্ষানবিশ সেলসম্যান” হিসাবে। হয়ত এটা ব্যঙ্গ করে বলা হয়েছিলো কিন্ত লুসটিগ যে কতবড় “সেলসম্যান” ছিলেন তা তার সারাজীবনে বিক্রি করা জিনিসের দিকে নজর দিলেই বোঝা যায়, তা সে দুইবার আইফেল টাওয়ার হোক কি টাকা তৈরির যন্ত্র।
Facebook Comments