সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু আসন্ন বাংলা নববর্ষ (পয়লা বৈশাখ) উপলক্ষে বেশি মুনাফার আশায় এক শ্রেণীর বিক্রেতা গোপনে ইলিশ বিক্রি করছেন। ইলিশের ‘বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুরের শহর কিংবা জেলার অন্য কোনো বাজারে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে না। চাহিদা থাকলেও আইনি ভয়ে ক্রেতারাও নিরব। কারণ প্রতিনিয়ত বাজারগুলো মনিটরিং করছে জেলা ট্রাস্কফোর্স।সোমবার (০৮ এপ্রিল) সকালে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য আড়ৎ বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে সবগুলো আড়তই ফাঁকা। কারণ ইলিশের আমদানি না থাকলে আড়তগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি থাকে না। শুধুমাত্র দুপুরে শরীয়তপুর জেলা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন জলাশয়ে চাষ হওয়া রুই, কাতলা, তেলাপিয়া ও চিংড়ি আড়তে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন লোকজন। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই এসব মাছ বিক্রি হয়ে যায়। এরপর আবার আড়তের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। মৎস্য ব্যবসায়ী হযরত আলী এক বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে বলেন, মৎস্য ব্যবসায়ীরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মান্য করেন। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গত কয়েক বছরই চাঁদপুরের ইলিশ ম্যানু থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় প্রশাসনসহ কোনো সংগঠনেই ইলিশের চাহিদা নেই। কেউ গোপনে বিক্রি করে কিনা তা আমার জানা নেই।
এদিকে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা থেকে আসা ক্রেতা মো. মানিক জানান, মাছের আড়তে গিয়ে ইলিশ চাওয়া হলে ওজন জেনে এনে দেওয়া হয়। আমি ৫০০’ গ্রাম ওজনের ২ কেজি ইলিশ দেড় হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। মৎস্য ব্যবসায়ী ছিদ্দিকুর রহমান এক বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে চাঁদপুরের নদীর ইলিশ ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণ আছে। ওইসব ইলিশের দাম ৫০০’ গ্রাম প্রতি কেজি ৬০০’ টাকা, ৮০০’ গ্রাম ১০৫০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১,৬০০’ টাকা ও ১ কেজি ৭০০’ থেকে ৯০০’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২,২০০’ টাকা। তবে কেউ কেউ মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত ইলিশ আরো কম দামে বিক্রি করেন।চাঁদপুর মৎস্য বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি আব্দুল খালেক মাল বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদপুর মৎস্য আড়তে কোনো তাজা ইলিশ বিক্রি হয় না। কেউ যদি অর্ডার দেয়, তাহলে কোল্ড স্টোরেজ থেকে এনে আগে সংরক্ষণ করা ইলিশ সরবরাহ করা হয়। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বলেন, চাঁদপুর মাছঘাটে গত কয়েকদিন আগে অভিযান চালানো হয়েছে। একটি আড়তে কিছু জাটকা পাওয়া গেছে। আর কোনোটিতেই ইলিশ পাওয়া যায়নি। কেউ গোপনে বিক্রি করে কিনা, তা আমার জানা নেই। তবে আমরা এখন আবার অভিযান পরিচালনা করবো। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, চাঁদপুরে জাটকা সংরক্ষণের জন্য মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে ইলিশ বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইলিশ বিক্রির কোনো সংবাদ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো। চাঁদপুরে পহেলা বৈশাখ উদযাপন কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে এই দুই মাস ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রতীকী চিত্র, সূত্র বাংলা নিউজ
Facebook Comments