সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলে কাশ্মীরবাসী লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) জাতির জাতির উদ্দেশে ভাষণে একথা বলেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর রাষ্ট্রপতির সই, রাজ্যসভা এবং লোকসভায় পাস— এই গোটা প্রক্রিয়ায় কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী।
মোদী বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষ দীর্ঘদিন যে সমস্যার মধ্যে ছিলেন, তা শেষ হয়েছে। আমাদের শিশুদের যে ক্ষতি হচ্ছিল, তা আলোচনাই হচ্ছিল না। বহু মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলো। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষকে অভিনন্দন।’
তিনি বলেন, ‘আইন তৈরির সময় সংসদে অনেক আলোচনা, বিতর্ক হয়। আমাদের দেশের কোনো সরকার, কোনো দলের সরকার বা জোটের সরকার এই কাজ করেনি। ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারা জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ও পরিবারবাদ ছাড়া আর কিছু হয়নি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় যুবকদের চাকরির জন্য় সরকার উদ্যোগ নেবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানকার যুবকদের চাকরির বন্দোবস্ত করার জন্য বলা হবে। শূন্য পদগুলোতে খুব শীঘ্রই নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সংরক্ষণের নিয়ম জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকরী হতো না, সেখানকার মানুষ এর সুবিধা পেতেন না। দেড় কোটির মতো মানুষ সেই কল্যাণ, সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থেকে যেত। জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশকর্মীরা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, সেগুলো পূরণ করা হবে। অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো বহু সুবিধা এখানকার মানুষ পাবেন। নতুন ব্যবস্থাপনায় জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ বহু সুবিধা পাবেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারায় জম্মু-কাশ্মীর এই অবস্থা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসবেই।’
এর আগে মঙ্গলবার সংসদে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সমাপ্ত করার একটি প্রস্তাব পাস করেছে। ওই রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বিভক্ত করার একটি বিলও পাস করানো হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করার বিল সংসদের উভয় কক্ষে পাস হওয়ার পরপরই মোদী বলেছিলেন যে এটি একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’। ট্যুইট করে মোদী বলেছিলেন, ‘আমরা একসঙ্গে, আমরা একসঙ্গে উঠে দাঁড়াব এবং একসঙ্গেই আমরা ১৩০ কোটি ভারতীয়দের স্বপ্ন পূরণ করব! আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি স্মরণীয় সময় এখন, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে পাস করেছে!
জম্মু ও কাশ্মীরকেবিশেষ মর্যাদাদানকারী ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন বড় পদক্ষেপের পর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে কাশ্মীরকে। এনিয়ে যেকোনও প্রতিক্রিয়া রোধ করতে উপত্যকাটি একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ অঞ্চলেই ফোন পরিষেবা এবং ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত রয়েছে। চলছে কারফিউ সেখানের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও মারফৎ প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ ঘিরে ছড়িয়েছে জল্পনা।
এদিকে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাশ্মীর ইস্যুকে তুলে ধরে ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে মরিয়া পাকিস্তান। ভারতের সাম্প্রতিক অবস্থানের জেরে দিল্লীর সঙ্গে সমস্ত রকম কূটনৈতিক এবং বাণিজ্য সম্পর্কে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে বুধবার পাকিস্তানের জাতীয় সুরক্ষা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। ভারত থেকে পাক রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাষণে মোদী কি বলতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ইতোমধ্যেই জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
দেশটির জাতীয় নির্বাচনের আগে গত ২৭ মার্চ মোদী জাতির উদ্দেশ্যে সর্বশেষ ভাষণ দিয়েছিলেন, তখন তিনি একটি লাইভ স্যাটেলাইটকে অ্যান্টি স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র (এ-স্যাট)-এর মাধ্যমে ধ্বংস করায় ভারতীয় ক্ষমতা প্রদর্শন নিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন।
আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দেশটির স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে তার প্রথাগত ভাষণের কয়েক দিন আগেই ফের এই ভাষণ এখন বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments