হঠাৎ করেই যেন সূর্যের তেজ বেড়ে গেছে। বাইরে বের হওয়াই দায়। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। ঘেমে গেলে অনেককেই পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতে। কারণ, অনেকের ঘামেই হয়ে থাকে দুর্গন্ধ। ঘামে দুর্গন্ধ হবার কারণ ব্যাকটেরিয়া। ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে বাজারে পাওয়া যায় নানা রকম ডিওডোরেন্ট। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করে এই ডিওডোরেন্ট। এরপর ঘামের দুর্গন্ধের সমস্যা আরও প্রকট হয়ে যায়।
ঘামের দুর্গন্ধের কারণে অনেক অস্বস্তিতে ভোগেন অনেকে। অনেকে আছেন ডিওডোরেন্ট বা পারফিউমে অ্যালার্জি আছে। তাদের জন্য সমস্যা আরও প্রকট। এর থেকে রক্ষা পাবার বেশকিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে খুব সহজেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে।
দুর্বাঘাসের রস :
দুর্বাঘাস সবার কাছেই পরিচিত। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে দুর্বাঘাস বেশ উপকারী। শুনতে অবাক লাগলেও দুর্বাঘাসের এই গুণটি রয়েছে। কচি সবুজ দুর্বাঘাস সংগ্রহ করে হামান দিস্তায় ছেঁচে রস বের করে নিন। এক কাপ পানির সাথে দুই টেবিল চামচ দুর্বাঘাসের রস মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এই অভ্যাসটি করলে আপনার ঘামে আর দুর্গন্ধ হবে না। সেই সাথে শরীর হবে ঝরঝরে এবং সতেজ।
রোজমেরি দিয়ে স্নান :
রোজমেরি শব্দটির অর্থ সমুদ্রের শিশির। মন ভোলানো সুঘ্রাণ সমৃদ্ধ এই গুল্মটির পাতায় ভীষণ সুঘ্রাণ থাকে, অনেকে মাংশের ভেতর দিয়ে থাকেন এই কারণে। এর পাতা দিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করা যায় যা চুলের জন্যে খুব উপকারী। কিছুদিন ধরে মাখলে শাদা চুলগুলো কিছুটা কালো হতে থাকে। কিন্তু শুধু চুলের জন্য নয় রোজমেরির আরেকটি গুণ হচ্ছে এটি শরীরের ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে। এক লিটার গরম জলে পরিমাণ মতো রোজমেরি ভিজিয়ে রাখুন মিনিট ২০। তারপর এই জল স্নানের জলের সাথে মিশিয়ে স্নান করুন। দেখবেন ঘামে আর দুর্গন্ধ হচ্ছে না। শরীর থেকে হালকা মিষ্টি সুবাস বের হচ্ছে। রোজমেরি স্নানের ফলে শরীর মন দুই সতেজ থাকে।
লেবুর রস :
লেবুর উপকারিতার শেষ নেই। খাবারের স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে শরীর সুস্থ রাখতে এর কোনো জুড়ি নেই। লেবু একই সাথে রূপচর্চার উপাদান, প্রাকৃতিক ওষুধ এবং খাবারের রুচি বর্ধক। লেবুর রসে রয়েছে প্রাকৃতিক অনেক গুণ। এর অনেক গুণের একটি হলো এটি ঘামের দুর্গন্ধের হাত থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন স্নানের পর হাতের তালুতে লেবু নিয়ে যেখান থেকে বেশি ঘামের গন্ধ বের হয় সেখানে লাগিয়ে নিন। ঘামে আর দুর্গন্ধ হবে না।
আলু :
আলু এমন একটি সবজি যা সব কাজেই লাগে। রান্না থেকে শুরু করে রূপচর্চা, গৃহস্থালীর নানা কাজেও আলুর ব্যবহার আছে। আলুর একটি গুণ হলো এটি ঘামের দুর্গন্ধের হাত থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। আলু স্লাইস করে নিন। স্নানের পর কাটা আলুর টুকরোগুলো বাহুসন্ধিতে ভালো মতো ঘষে নিন। রস শুকিয়ে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করুন। এর আগে গায়ে জামা চাপাবেন না। এরফলে ১২ ঘণ্টা ঘামের দুর্গন্ধের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।
টমেটো :
টমেটো ফল নাকি সবজি এই নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এর গুণের ব্যাপারে কারও সন্দেহ নেই। টমেটোর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-সেপ্টিক উপাদান। ঘামের মূল কারণ ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এই অ্যান্টি-সেপ্টিক। এর ফলে আর দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে না। শরীরের ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে টমেটোর বেশ নাম ডাক রয়েছে। বিশেষ করে টমেটোর রস জলে মিশিয়ে তা দিয়ে স্নান করলে ঘামে দুর্গন্ধ হয় না। প্রতিদিন দুই গ্লাস টমেটোর জুস খেলেও ঘামের দুর্গন্ধ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
গোলাপজল :
গোলাপজল খুবই সহজলভ্য একটি উপাদান। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে এটিই সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান। প্রতিদিন গোলাপজল ব্যবহারে নিরাপদ থাকা যাবে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে। গোলাপজল স্নানের জলে মিশিয়ে স্নান করলে গা থেকে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়ে শরীর হবে সস্তেজ এবং ঝরঝরে।
Facebook Comments