১১টি তীরে বিদ্ধ হয়ে তরীর আগে বাগান নৌকো ডুবতে ডুবতে কোনো মতে বাঁচল এটা বলা যায়। গত ম্যাচগুলোর থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি বাগান টিম তা খেলার প্রত্যেক মুহূর্তে ফুটে উঠছে, খেলা শেষ হল ১-১ গোলে ড্র হয়ে। কোথাও যেনো খেলোয়াড়দের দায়বদ্ধতার অভাব ফুটে উঠল বারবার। যেখানে ময়দানে আই লিগ ফিরিয়ে আনার মতো অসাধ্যসাধন করল কর্মকর্তারা সেখানে খেলোয়াড়দের এইরকম মনোভাব ভীষন দৃষ্টিকটু। মাঠ ছিলো কানায় কানায় ভর্তি, শুক্রবারের দুপুর হওয়া সত্ত্বেও।
ভারতীয় দলের ভবিষ্যৎ এই ইন্ডিয়ান অ্যারোজ দলের খেলোয়াড়রা। পুরো ম্যাচ জুড়ে তাদেরই আধিপত্য দেখা গেলো। কোচ মাটোসের নির্দেশ অনুযায়ী মাটিতে বল রেখে খেলল অ্যারোজ দলটি। বিশেষ করে বলতে হয় দুই স্টপার জিতেন্দ্র সিং ও আনোয়ার আলির কথা। বাগানের বহু টাকা খরচ করা বিদেশী ডিকা ও ক্রোমাকে নড়তেও দেয়নি ৯০ মিনিট এই দুই ভারতীয় ভবিষ্যৎ। বাগান কোচের নিস্ফল পায়চারি দেখে প্রত্যেক মুহূর্তে মনে হতে লাগলো এই দল তাদের চালিকাশক্তি সনি নর্ডিকে ছাড়া চলবে না। আর বিদেশী স্ট্রাইকার ডিকা বোধহয় পরে নিজের খেলা ও মিস করা সুযোগগুলো দেখলে লজ্জা পাবেন। শেষ ২৫ মিনিট অ্যারোজকে ১০ জনে খেলতে হল অমরজিত কিয়াম লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার তাও তাদের খেলার ঝাঁজ কিছু মাত্র কমল না।
২৭ মিনিটে দিপান্ডা ডিকা পেনাল্টি থেকে বাগানকে এগিয়ে দিলেও ৫ মিনিটের মধ্যে অ্যারোজের হয়ে রাহুল প্রবীন দ্রুত কাউন্টারে শোধ করে গোল। লাজং ম্যাচের নায়ক ও বিষ্ময় গোলের মালিক নাওরেম আজ অ্যারোজের হয়ে শুরু করলেও তেমন দাগ কাটতে পারেনি, তাই ৬১ মিনিটের মাথায় পরিবর্তন করা হয় তাকে। ম্যাচের ৭১ মিনিটের মাথায় বাগানের পরিবর্তন হয়ে আসা খেলোয়াড় মননদীপ সিং এর ব্যাকভলির চেষ্টা প্রচন্ড জোরে অ্যারোজের আশিস রাইয়ের মাথায় লাগে। তারপর তাকে তুলে নিতে হয় কনকাশনের জন্য।
সবশেষে অ্যারোজ কোচ মাটোস সাংবাদিক বৈঠকে বলে যান, “হয়ত আমরা এই ম্যাচটি আজ জিতে যেতেও পারতাম। আমি গর্বিত আমার দলের ছেলেদের জন্য। ধন্যবাদ কলকাতার দর্শকগণকে অসাধারণ খেলার পরিবেশ দেওয়ার জন্য। আশা করছি আশিস রাই এর কনকাশনের সমস্যা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে ও সুস্থ হয়ে উঠবে।”
“আমি দর্শকদের কোনো দোষ দেখিনা। ওরা আসেন বহুদূর থেকে জয় দেখতে। আর কত সুযোগ পাওয়া যেতে পারে জেতার জন্য। এইরকম খারাপ খেলে ড্র করা হেরে যাওয়ার থেকেও লজ্জার। আমি কোনো অজুহাত দেবোনা এই ফলের জন্য।” – বাগান কোচ সঞ্জয় সেন দর্শকদের থেকে “Go Back Sanjay” শোনার পর এই প্রতিক্রিয়া জানান। ৬ ম্যাচ পরে ১০ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান এখন লীগটেবিলে চার নম্বরে, এক নম্বর ইস্টবেঙ্গলের সমসংখ্যক ম্যাচে থেকে ৩ পয়েন্ট দূরে।
কোনো বিদেশী ছাড়া এই উনিশ বছর না পেরোনো ছেলেগুলোর নাছোড় লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে ভুলল না বাগানি জনতা। প্রিয় দলের বিশ্রী ড্র দেখেও খেলা শেষে অ্যারোজ দলকে সমবেত করতালি সমেত অভিবাদন জানিয়ে মাঠ ছাড়ল জনতা, পরের ঘরের খেলা চেন্নাই সিটি এফ সি এর বিরুদ্ধে ২রা জানুয়ারিতে জেতার আশা নিয়ে।
Photography – Rainak Dutta
Facebook Comments