মাছ ধরার ‘মুগো সুতো’র বয়ন শিল্পের চাহিদা আর আগের মত নেই। ফলে এই শিল্পটি হারিয়ে যাবার পাশাপাশি ক্রমশ আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল হয়ে পড়ছেন এই ব্যবসার সাথে যুক্ত মানকরের বেশ কয়েকটি পরিবার। এই শিল্পের সাথে বংশপরম্পরায় আছেন নবকুমার নন্দী সহ বেশ কয়েকটি পরিবার। নবকুমার নন্দী বলেন, পারিবারিক সূত্রে এই পেশায় আছি। কিন্তু এখন আর আগের মত এই শিল্পের চাহিদা নেই। বর্ধমান থেকে আসানসোল পর্যন্ত একমাত্র মানকরেই পাওয়া যেত এই মুগো সুতো। এখন কলকাতা থেকে কাঁচামাল এনে সেগুলি দিয়ে কোনভাবে এই রুগ্ন শিল্পটিকে সচল রাখার চেষ্টা। মানকর, বুদবুদ ও বর্ধমান বাজারে বিক্রি হয় এই সুতো। লাভ বিশেষ নেই, কোন রকমে দৈনিক মজুরীটুকু উঠে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা সুদীপ্ত পাল বলেন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন রাজ্যে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ঘটুক। প্রায় হারিয়ে যেতে চলছে এই শিল্পটি। এক্ষেত্রে প্রশাসন তৎপর হলে শিল্পটিকে বাঁচানো যেত।
পারিবারিক ভাবে এই শিল্পের সাথে যুক্ত বলাই হালদার বলেন, ‘মুগো’ হচ্ছে আসলে একটি গুটি, যা আসাম থেকে আসত। গুটি থেকে সুতো বের করে পাকানো হত। পরবর্তীকালে মুগোর ব্যপক চাহিদা থাকলেও জোগান ছিল না, তাই তখন লাইলন সুতো পাকানো হত ও তাতে মুগোর রঙ ব্যাবহার করা হত। এই সুতোরও চাহিদা ছিল। মানকর থেকে কলকাতা, সাঁইথিয়া, দুমকা যেত এই সুতা। কিন্তু ধীরেধীরে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। পরিশ্রম হচ্ছিল অথচ লাভ সে রকম কিছুই থাকতো না, তাছাড়া শ্রমিক সমস্যা, ও আরো নানা কারণ থাকায় শিল্প বন্ধ করে বিকল্প পথে রোজগারের পথে এখন অনেকেই। এখন যে সুতা তৈরি হয় তা ড্রেকলোন নামে পরিচিত।
নবকুমার নন্দীর আক্ষেপ, এককালে মানকরের জনপ্রিয় এই শিল্পটিকে এখন বাঁচিয়ে রেখেছে মাত্র তিনটি পরিবার এবং এই পরিবারগুলিরও পরবর্তী প্রজন্মের আগ্রহ নেই শিল্পটিকে ধরে রাখার। এর প্রধান কারণ আর্থিক অভাব। অভাবের সংসারেও এই পরিবারগুলি অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য পেলে রুগ্ন শিল্পকে নতুন জীবন দেবেন তাঁরা।
Photography – Sudeep Pal
Facebook Comments