সমস্ত ভারতবাসীর পাশাপাশি অধীর আগ্রহে গভীর রাত পর্যন্ত চোখ মেলে বসে ছিল গোটা বিশ্ব। মধ্যরাতে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ‘বিক্রমে‘র চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ দেখতে বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইসরোর সদর দপ্তরে হাজির হন। যদিও চাঁদের মাটিতে নামার কয়েক মুহূর্ত আগেই ইসরোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ‘চন্দ্রযান- ২’ এর ল্যান্ডার বিক্রমের।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এখনো ‘বিক্রমে’র সঙ্গে কোনো ধরনের সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি ইসরো। এই অবস্থায় আবেগে ভেঙে পড়েন কে শিবন, তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখন সাহস জোগাতে পিঠে চাপড়ে চুপি চুপি দুয়েকটি কথাও বলেছেন তিনি।
এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের পর উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণও দিয়েছেন তিনি। যেখানে এই কঠিন সময়েও ইসরোর বিজ্ঞানীদের পাশে থাকার বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ‘বিজ্ঞানীদের সাহস ও কাজের প্রতি আনুগত্য গোটা দেশের কাছে অনুপ্রেরণা। সাময়িক ব্যর্থতার ফলে আমাদের চাঁদে যাওয়ার জেদ এবার আরও বেড়ে গেল।’ উপস্থিত বিজ্ঞানীদের সহানুভূতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘এটা জীবনের এক উত্থান ও পতন। এটা আমাদের জন্য কম কৃতিত্ব নয়। আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আপনারা সবাই দেশ, বিজ্ঞান ও মানুষের জন্য দারুণ কাজ করেছেন। সব রকমভাবে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যান।’
ইসরোর মিশন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন, ‘আগামী দিনেও ভারত মহাকাশে ‘বিক্রম’ দেখবে। আমরা ভবিষ্যতে আরও অভিযান করব। আমি আপনাদের পাশে, হিম্মত রাখুন। আপনাদের সাহসে দেশ আরও আনন্দ করবে।’ অপর দিকে বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের মাধ্যমে প্রথম দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল ভারতের। যদিও শেষমেশ মিশনকে আর সফলের বার্তা দিতে পারেনি ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মতে, ইসরো চাঁদে নতুন অভিযানের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। যেখানে অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘চন্দ্রযান-২’ নামে নতুন স্যাটেলাইট। এবার যানটি চাঁদে অবতরণ করতে পারলে এটি হতো বিশ্বের চতুর্থ কোনো দেশের সফলভাবে চন্দ্র অভিযান। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) সফলভাবে নিজেদের অভিযানটি সম্পন্ন করেছিল।
ইসরো জানায়, চাঁদ থেকে জল, খনিজ ও পাথর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ১৫ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ‘বিক্রম’ নামে যানটিকে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই এর ল্যান্ডর থেকে বেরিয়ে আসার কথা ছিল ভীষণ ছোট একটি রোভার ‘প্রজ্ঞান’। যার ওজন মাত্র ২০ কিলোগ্রাম। আর ‘চন্দ্রযান-২’ এর সার্বিক ওজন ৩ হাজার ৮৫০ কিলোগ্রাম। ল্যান্ডরটি নেমে আসার সময় ‘চন্দ্রযান-২’ এর অরবিটারটি চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার ওপরে ছিল। এর আগে ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন চাঁদের কক্ষপথে গিয়েছিল ‘চন্দ্রযান-১’। চাঁদে জলের অন্যতম উপাদান হাইড্রক্সিল আয়নের খোঁজ দিয়েছিল যানটি।
Facebook Comments