চলে গেলেন ‘সোনালি কাবিন’ খ্যাত কবি আল মাহমুদ। গতরাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। শ্রদ্ধা জানাতে সকালে কবির মরদেহ নেয়া হয় বাংলা একাডেমিতে। পরে তার মরদেহ নেয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নামাজে জানাজা। বাদ জোহর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। পরে এরপর আল মাহমুদকে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। আগামীকাল (রোববার) বাদ জোহর সেখানেই তাকে দাফন করা হবে।
কবি আল মাহমুদ। পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে যে কজন বাংলা কবিতাকে আধুনিকভাবে নতুন আঙ্গিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম কবি আল মাহমুদ।
তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ছিলেন। ১৮ বছর বয়সেই তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়। ষাটের দশকে প্রকাশিত আল মাহমুদের লেখা লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন কাব্যগ্রন্থই তাকে কবি হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-মায়াবী পর্দা দুলে উঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, নদীর ভেতরের নদী, পাখির কাছে, ফুলের কাছে, দিনযাপনসহ নানা গ্রন্থ। আল মাহমুদ স্বাধীনতা উত্তর ‘দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বেশ কয়েক বছর। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।
১৯৯০ এর দশকে ইসলামী ধর্মীয় বোধের দিকে ঝোঁকে পড়েন বলে কিছুটা বির্তকিত হোন কবি আল মাহমুদ। যদিও বিভিন্ন সময়ে তা অস্বীকার করেছেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই নিউমোনিয়াসহ বাধ্যর্কজনিত রোগে ভুগছিলেন কবি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রথমে সিসিইউতে ও পরে আইসিইউতে নেয়া হয় তাকে। পরে শুক্রবার লাইফ সার্পোটে নেয়া হয় তাকে। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৫ মিনিটে তার লাইফ সার্পোট খুলে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করনে। শনিবার সকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কবির মরদেহ আনা হয় বাংলা একাডেমিতে।
কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন-মানুষের ভালবাসাই একজন কবির জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। এরপর আল মাহমুদের মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। এখানে ছুটে আসের কবির এক সমকার সহযাত্রী-সহকর্মীরা। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম নামাযে জানাযা। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে হয় দ্বিতীয় নামাযে জানাজা। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় সোনালী কাবিন খ্যাত কবি আল মাহমুদকে।
Facebook Comments