১৩ তারিখ নাকি ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটতে চলেছে। এই বছর আইলিগের প্রায় ফাইনাল বলা চলে যে ম্যাচ, মিনার্ভা পাঞ্জাব বনাম ইস্টবেঙ্গল সেই খেলা ওইদিন। অভূতপূর্ব ঘটনাটি হল যে মিনার্ভা নাকি ওইদিন ১৩ জনে ম্যাচ খেলবে। অবাক লাগছে কি? কারণ ফুটবল টিমে তো ১১ জন খেলোয়াড় থাকে, এবং ১৩ জনে অপরপক্ষ খেলবে এটা ইস্টবেঙ্গল ও ফেডারেশন মেনে নেবেই বা কেন। এখানেই সেই আসল যুক্তি, তা সাজাচ্ছেন তামাম ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। তাদের বক্তব্যে মিনার্ভার ১১ জন খেলোয়াড়ের সাথে রেফারি ও আইলিগের সিইও সুনন্দ ধর মিনার্ভার হয়ে খেলবেন ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে। আশ্চর্যভাবে এই যুক্তি মানছেন ক্লাব কর্তা দেবব্রত সরকার। কিসের এত ভয়? ১৪ বছর ধরে জাতীয় লিগ না পাওয়ার দুঃখেই কি এমন যুক্তি তাও খেলা শুরু হওয়ার ১ সপ্তাহ আগে? শেষ ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের কাছে লজ্জার হারের পর থেকেই সমর্থক ও কর্তারা লিগের স্বপ্ন দেখা একরকম ছেড়েই দিয়েছেন। হয়ত তারই ফল এইসব আজগুবি যুক্তি ও অভিযোগ।
সমর্থক ও ক্লাব কর্তারা অবশ্য কোনদিকে যাবেন তা বলা মুশকিল। অনেক আশা করে ক্লাব কর্তারা আইজলকে লিগ দেওয়া কোচ ও আইজলের শিরদাঁড়া ভেঙে ছয়জন খেলোয়াড় হাইজ্যাক করে নিয়ে এলেন কলকাতায়। কোচ এলেন এবং সবেধন নীলমণি কলকাতা লিগ, যা বেশ কিছু বছর “কেটে যাওয়া CFL” নামেই পরিচিত, জিতলেন। এরপর আইলিগ শুরু হতেই কোচের প্রিয় উইলিস প্লাজা ও চার্লস এমন খেলা খেলতে শুরু করলেন যে ক্লাব কর্তারা তাদের পত্রপাঠ বিদায় করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এরপরও কোচের কার্যকলাপের শেষ নেই। সাংবাদিকদের গালমন্দ করে ও অভিশাপ দিয়ে নতুন এক উপাধি পেলেন “তারাপীঠ ফেরত কোচ”। ক্লাব কর্তারা নাজেহাল হয়ে কিংবদন্তি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে জুড়ে দিলেন টিমের সাথে। দলে প্রচন্ড ক্ষোভ কোচের বিভিন্ন কার্যকলাপে। সিনিয়র প্লেয়াররা টিমে জায়গা তো দূর টিমের মিটিংয়ে পর্যন্ত জায়গা পাচ্ছেন না। যেদিন যে প্লেয়ার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পরেরদিন প্র্যাকটিস ছাড়া তাকে মাঠে নামানো হচ্ছে। এরপরে বিদেশী নির্বাচন। মোহনবাগান বাতিল বিদেশীতে টিম বোঝাই করেছেন কোচ ও কর্তারা। সে বুড়ো এদুয়ার্দো হোক কি “খেপ-সম্রাট” আনসুমানা ক্রোমা, যথাযত শুধুই কাৎসুমি। আল আমনাকে যত সুন্দর কলকাতা লিগে লেগেছিলো ততটাই খারাপ আইলিগে লাগছে। আসলে খেলোয়াড়, কোচ ও কর্তাদের আর কবে বুঝবেন কলকাতা লিগের রেনবো এফসি বা মোহনবাগানের জুনিয়র টিমের মত টিম তো আইলিগে খেলবে না। এই ক্ষমতালোভী কর্তারা হলেন রূপকগল্পের সেই শিয়াল পন্ডিত যে একটি কুমিরছানা দেখিয়ে বলবে সবাই আছে। এক্ষেত্রে কুমিরছানা হল কলকাতা লিগ, সে টানা ৮ বার জিতুন বা ৮০ বার, আইলিগ অন্য যুদ্ধক্ষেত্র।
ময়দানি কর্তারা বরাবরই বড়নামের পিছনে ছোটেন। অথচ মিনার্ভা বা নেরোকার মত টিমরা তৃণমূল স্তর থেকে টাট্টু ঘোড়া তুলে আনে। মাত্র ২ কোটির টিম এই দুই দল বানিয়েছে। অথচ দুইদলই এই মুহূর্তে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার। মিনার্ভা কর্তা রঞ্জিত বাজাজ হলেন ভারতীয় ফুটবলের অতি ধুরন্ধর একজন কর্তা। যিনি এই মেগা ম্যাচের আগে ইস্টবেঙ্গলকে প্রবল চাপে রাখার জন্য ইস্টবেঙ্গল বিতাড়িত বাজিকে তুলে নেন ওই এক ম্যাচের জন্য। তাই একজন ফুটবল সমর্থক ও সমালোচক হিসাবে ভাবি হায়রে গঙ্গাপাড়ের দুই ক্লাব, আর কবে ঐতিহ্যর দোহাই না দিয়ে প্রকৃত রণনীতি বানিয়ে মাঠে নামবে।
সবশেষে খেলা শুরু হওয়ার এত আগে ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ও কর্তাদের হেরে যাওয়া পরবর্তী যুক্তি সাজানোর মত হাস্যকর কাজকে মাথায় রেখে দুই দলকে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে What’s New Life এর পক্ষ থেকে। ভালো খেলা জিতুক, এটাই সবার কাম্য। তবু এই মুহূর্তে ময়দানে প্রচলিত ইস্টবেঙ্গলের জন্য প্রবাদপ্রতিম হতে চলা মন্তব্য দিয়ে শেষ করব, “বন্যরা বনে সুন্দর, ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগে”। হোক কলরব!! ১৩ তারিখে।
Photographs – eastbengal & minarva fc facebook
Facebook Comments