ভারতে সদ্যপ্রণীত সিএবি না মানার ঘোষণা করে গতকাল গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ এবার ভারতের ছয় মুখ্যমন্ত্রী আইনটি না মানার ঘোষণা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের পর দিল্লি, পঞ্জাব, ছত্তিসগড়, কেরালা ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত আইন কোনোভাবে তাদের রাজ্যে প্রয়োগ করতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকারের শরিক কংগ্রেসের এক মন্ত্রীও আইনটি রাজ্যে প্রয়োগ করতে না দেয়ার ঘোষণা দেন।
তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলো থেকে একযোগে প্রতিবাদের ডাক ওঠায় আজ শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একটি কেন্দ্রীয় আইন। তাই ওই আইন সব রাজ্যেই প্রযোজ্য হবে। কোনও রাজ্য সরকারের তা আটকানোর অধিকার নেই।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএবি) পশ্চিমবঙ্গে হতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে নিজে মাঠে নামার ঘোষণা ছাড়াও বিজেপি বাদে অন্য সব রাজনৈতিক দলকে এর প্রতিবাদে গণআন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মমতার মতো বাকি রাজ্যগুলোরও অন্য রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরাও একই সূরে কথা বলেছেন। দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও পাঞ্জাবে রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও একই নাগরকিত্ব আইন তাদের রাজ্যে প্রয়োগ হতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া ছত্তিশগড়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলীয় মুখমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশেও রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস। দলটির মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের সরকারও আইনটি না মানার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া কেরালায় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও এমন কথাই বলেছেন।
কিন্তু কেন্দ্রীয় আইনের প্রয়োগ কোন পথে ঠেকাবে রাজ্যগুলো সে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘অসাংবিধানিক আইন। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইন কী ভাবে আটকানো যায় তা দেখতে হবে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, সংবিধানের সপ্তম তফসিলে অন্তর্ভূক্ত নাগরিকত্বের বিষয়টি কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্গত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সব রাজ্য ওই আইন মানতে বাধ্য। নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োগকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না কোনো রাজ্য। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, ‘কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ করব না—এমন কোনো ক্ষমতা রাজ্য সরকারকে দেয়া হয়নি। ভারতের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কোনও রাজ্যকে সেই ক্ষমতা দেয় না।’
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments