“স্ট্রাইকার-গুটি-বোর্ড” এই তিনটে শব্দ একসাথে শুনলে একমাত্র যে শব্দ মাথায় আসে তা হল “ক্যারাম”। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হয় এটা যেমন, “কোরাম”, “ক্যারম”, “ক্যারমস”। আনুমানিক ২০০ বছর আগে এই খেলাটি শুরু হয়েছিলো ভারতীয় মহারাজাদের হাত ধরে। মূলত খেলাটি “বিলিয়ার্ডস” এর ভারতীয় সংস্করণ বলা যেতে পারে। প্রধানত খেলা হয়ে থাকে ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে, যেমন ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।
আমরা বাঙালি মাত্রই ক্যারাম কি জিনিস ভালোই জানি। তবুও ক্যারামের ইতিহাস ছেড়ে একটু ভূগোলে আসা যাক, মানে এটি কিভাবে খেলা হয়। চৌকো বোর্ড, চারটে পকেট, নয়টি সাদা ও নয়টি কালো গুটি ও একটি লাল বা রাণী গুটি। স্ট্রাইকার দিয়ে গুটি পকেটে ফেলো এই হল খেলার মূল-মন্ত্র।
ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষের জীবন-সঙ্গী হয়ে উঠে ক্যারাম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। আকাশ থেকে বোমা-বর্ষণ হচ্ছে এদিকে বাঙালি আঙুলের ডগায় স্ট্রাইকার নিয়ে গম্ভীর মুখে গুটি পকেট নিশানা করছে, এই ছিলো সেই সময়ের চেনা ছবি। লালমোহন বাবু থাকলে নিশ্চিত বলতেন “হাইলি সাসপিশাস”।
উত্তর-দক্ষিণ কলকাতা বা কলকাতা সংলগ্ন সমস্ত জায়গায় ক্লাবঘরে ক্যারাম বোর্ড পাওয়া যাবেনা এটা ভাবাই যায়না। নানান জায়গায় ক্যারামের প্রতিযোগিতা তো হচ্ছেই এ ছাড়াও আবাল বৃদ্ধ-বনিতার মধ্যে এই স্মার্টফোনের যুগেও ক্যারামের কদর কমেনি। বাতাসে ঠান্ডার শিরশিরানি শুরু হয়েছে, ছুটির দিনের কথা তো বাদ দিলাম কাজ থেকে ফিরে চা খেয়ে গিন্নির পাশে বসে বাঙালি পুরুষ ওই শাশুড়ি-বউমার ঝগড়ার সিরিয়ালে মন না দিয়ে নিজেকে ক্যারাম বোর্ডে সঁপে দিচ্ছে আবার। সেইসময় বউ, প্রেমিকা সবাইকে ভুলে বাঙালি রাজা হয়ে উঠে এবং ক্যারামের রানী মানে লাল গুটিকে পকেটস্থ করে পয়েন্ট বাড়ানোর চিন্তায় মেতে উঠে। কলকাতার ক্যারাম তৈরীর আস্তানা হল শ্যামবাজার সংলগ্ন ফড়িয়াপুকুর ও কলেজস্ট্রিট অঞ্চল। সেখানকার দোকানে কান পাতলে ক্যারাম খেলার আকালের কথাই শোনা যায় কিন্তু আমরা What’s New Life টিম বিভিন্ন পাড়া ঘুড়ে অন্য চিত্র দেখলাম। যাদের এই লেখা পড়ে অতীতে নিজের ক্যারাম খেলার কথা ভেবে আকুল তারা এই ক্ষণেই ক্লাবের দিকে পা বাড়ান আর যারা নিয়মিত খেলেন তারা ভাবুন আর কি নতুন শট মেরে পাড়া মাতানো যায়।
ও হ্যাঁ যারা ক্যারামের সাথে ভ্ৰমণ-পিপাসু, তাদের জন্য বলি, পাতিয়ালা মহারাজদের প্যালেসে এখনো তাদের ব্যবহৃত বহু পুরোনো কাঁচের ক্যারাম বোর্ডটা যত্ন করে রাখা। দেখে আসবেন নাকি??
Photographs – Rainak Dutta
Facebook Comments