লোকসভা নির্বাচনে আর মাত্র এক দফার ভোট বাকি, দেশটির রাজনীতিবিদদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণাও বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। বিশ্বের বৃহত্তম এই গণতান্ত্রিক দীর্ঘ ভোট প্রক্রিয়ায় কাদা ছোঁড়াছুড়ি ছিল চরম পর্যায়ে, আর এক্ষেত্রে মোদী-মমতা ছিলেন শীর্ষে, রোজ একে অপরকে দেয়া বিদ্রুপাত্মক ভাষণ যেন সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। ক্ষমতাসীন মোদীকে হারাতে এবার বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোট গড়ার তত্পরতা শুরু হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই। এ বার তা নিয়ে আরও মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু হল। এক দিকে যেমন দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে একজোট করতে তত্পরতা তুঙ্গে তুললেন চন্দ্রবাবু নায়ডু, অন্য দিকে বিজেপি-র পাশাপাশি কংগ্রেসের থেকেও সমান দূরত্বের নীতি থেকে সরে আসার বার্তা দিলেন বিজেডি নেতা নবীন পাট্টনায়ক। জোটের শরিক হতে বামেদের তরফেও মিলেছে সদর্থক বার্তা। জোট নিয়ে ব্যক্তিগত স্তরে আগেই উদ্যোগী হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। ২৩ মে দিল্লিতে বিরোধীদের নিয়ে বৈঠকের আগেই প্রাক্তন ইউপিএ শরিকদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছিলেন তিনি। এবার কে চন্দ্রশেখর রাও, জগন্মোহন রেড্ডি, নবীন পাট্টনায়কদের মতো আঞ্চলিক স্তরের হেভিওয়েট নেতাদেরও বার্তা দিতে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিলেন।
এর পাশাপাশি, জোটের স্বার্থে মরিয়া চন্দ্রবাবু জানিয়ে দিলেন, নিজের ‘রাজনৈতিক শত্রু’ চন্দ্রশেখরের দিকেও হাত বাড়াতে আপত্তি নেই তার। কংগ্রেস যখন সমস্ত আঞ্চলিক দলকে জোট গঠনের তত্পরতা বাড়াচ্ছে, সে সময় অ-বিজেপি এবং অ-কংগ্রেসি জোটের জন্য আরও উদ্যোগী হচ্ছেন তেলাঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)-র নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও। এই আবহেই শনিবার (১৮ মে) সকালে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন তেলুগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু। মূলত ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়েই আলোচনা করেন তারা। এরপর, তিনি এনসিপি নেতা শারদ পওয়ারের সঙ্গেও দেখা করেন। কংগ্রেসের সঙ্গে কথা হয়েছে জেডিইউ নেতা দেবগৌড়াও। মহাজোট গড়তে মুখ্য সূত্রধর হিসাবে উদ্যোগী নায়ডু দেশটির বিএসপি নেত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কথাবার্তা চালান। শনিবার দুপুরেই তিনি লখনউ গিয়েছেন। সেখানে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী এবং সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। অ-বিজেপি জোটের পক্ষে সুখবর হচ্ছে, নবীন পাট্টনায়কের দল বিজেডি তাদের ঘোষিত নীতি নিয়ে নমনীয় হয়েছে। এত দিন বিজেপি এবং কংগ্রেস— দুই দলের থেকেই সমদূরত্বের নীতি নিয়েছিল তারা। তবে, ভোটপ্রচারে গিয়ে বিজেপি-কে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে আখ্যা দেয়ার পর থেকে উত্সাহিত হয়েছে কংগ্রেস।
তারপরই এ দিন বিজেডি নেতা তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাট্টনায়ক জানিয়েছেন, ওড়িশার স্বার্থরক্ষার্থে যে দলই কাজ করবে তাকেই সমর্থন করবে তার দল। ২০০০-২০০৯ পর্যন্ত ওড়িশায় বিজেপি’র জোটসঙ্গী নবীন পাট্টনায়ক জানিয়েছেন, রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য যে দল রাজি থাকবে, তাদেরই সমর্থন করবে বিজেডি। তার আরও দাবি, জোট গড়ায় বিজেডি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করবে। চন্দ্রবাবু নায়ডুর এই উদ্যোগ ছাড়াও দেশের সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে অ-বিজেপি এবং অ-কংগ্রেসি জোট গঠনে তত্পর হয়েছেন টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও। ইতিমধ্যেই ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে চন্দ্রশেখরের। তবে, তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের সঙ্গে চন্দ্রবাবুর তেমন ‘সদ্ভাব’ না থাকলেও জোটের স্বার্থে তার সঙ্গেও কাজ করতে রাজি তিনি। চন্দ্রবাবু বলেন, ‘কেবলমাত্র টিআরএস নয়, বিজেপি বিরোধী যে কোনও দলই স্বাগত। এ রকম সব দলকেই মহাজোটে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ আগামী ২৩ মে দিল্লিতে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়ার ডাকা বিরোধীদের নিয়ে বৈঠকের আগেই বাম এবং আপের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়েছেন চন্দ্রবাবু। শুক্রবার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। সীতারাম জানিয়েছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষ জোটের স্বার্থে সমর্থন দেবে সিপিএম।
Facebook Comments