যে ঘুমন্ত শহরকে জাগাবেন বলে একদিন রুপালি গিটার হাতে অলিগলিতে ঘুরে বেরিয়েছেন, সেই শহরে চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে গেলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে তাকে।
গত শনিবার ২০ই অক্টোবর মাগরিবের নামাজের আগে চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজারের চৈতন্যগলি বাইশমহল্লা কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। মায়ের পাশে দাফনের বিষয়টি ছিল আইয়ুব বাচ্চুর অন্তিম ইচ্ছা। গত ১৮ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যান আইয়ুব বাচ্চু।
আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে নেতা শূন্য হয়ে পড়েছে তাঁর হতে গড়া ব্যান্ড দল এলআরবি। ১৯৯১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করা এলআরবিকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। আইয়ুব বাচ্চু না ফেরার দেশে চলে যাওয়াতে তার অবর্তমানে দেশের জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের হাল ধরবে কে? এ প্রশ্নটিই এখন অনেকের মাঝে ঘোরপাক খাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, তার জীবদ্দশাতেই বারবার এই প্রশ্ন উঠেছে যে তার অবর্তমানে কে হাল ধরবে ব্যান্ড দলের। কী হবে দলটির ভবিষ্যৎ?
সে সময় তিনি হাসিমুখে বলতেন, এলআরবির ভবিষ্যত সময়ের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত। দল হিসেবে এলআরবি না থাকলেও ভক্তদের মাঝে আর গানে গানে এলআরবি বেঁচে থাকবে।
এলআরবির ২৭ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইয়ুব বাচ্চু হাসিমুখে বলেছেন ‘যে গাছ চলে যায় তার আর রিপ্লেসমেন্ট হয় না। এক ঘরের কর্তা একজনই। এক ঘরে তো আর অন্য কেউ কর্তা হয় না।’
এছাড়া, তার মৃত্যুর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হওয়া খবরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এখনও বেঁচে আছি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এলআরবি নিয়েই আছি। আগামীতে কী হবে সেটা এখনই বলতে পারছি না। উত্তরসূরি কে হবেন সেটাও জানি না। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই ভাবছি না। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’
এদিকে, এলআরবির ভবিষ্যত নিয়ে ব্যান্ডটির ম্যানেজার শামীম শোনালেন স্বস্তির কথা।
তিনি বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর অবর্তমানে তার হাতে গড়া এলআরবির জনপ্রিয়তায় যেন এতটুকু ভাটা না পড়ে সেটাই এখন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা যতদিন পারি, চেষ্টা করে যাবো যেন এলআরবি জনপ্রিয়তা নিয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকে। বর্তমানে এলআরবির সঙ্গে আমরা চারজন আছি। আমি ম্যানেজার, মাসুদ-গিটার, স্বপন-বেস আর রোমেল-ড্রামস। নতুন একজন ভোকালিস্ট যুক্ত করবো। আর আইয়ুব বাচ্চুর একমাত্র ছেলে আহনাফও এলআরবির সঙ্গে থাকবে, সবসময়ই থাকবে।’
ভবিষ্যত দলপ্রধান কে হবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে আহনাফ তাজওয়ার এখন কানাডায় পড়াশোনা করছেন। আমরা তার পড়াশোনা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকে সাহায্য করব। মাঝে মাঝেই সে আমাদের সঙ্গে হাজির হবে।’
নতুন ভোকালিস্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘কখনোই আইয়ুব বাচ্চুর মতো আর কেউ হবে না। আমরা শুধুমাত্র তার উত্তরসূরী খুঁজবো। এদেশে অনেকেই আইয়ুব বাচ্চুর গান চর্চা করেন, আইয়ুব বাচ্চু হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাদের মধ্য থেকেই কাউকে বেছে নিতে চাই। দরকার হলে ‘এলআরবির জন্য ভোকাল হান্ট’ করব।’
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে রক, হার্ডরক, সফট রক, অল্টারনেটিভ রক, মেলোডি ধাঁচের গান দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছে দলটি। এখন পর্যন্ত দলের স্টুডিও অ্যালবাম ১১টি। মিক্সড অ্যালবাম রয়েছে ৯টি।
আইয়ুব বাচ্চু একাধারে গায়ক, লিডগিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। তিনি এল আর বি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকালিস্ট ছিলেন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সঙ্গীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি।
Facebook Comments