সামনের জায়ান্ট স্ক্রিনে শোনা গেল “ভক্তের অধীন হউ চিরদিন থাকো ভক্তের অন্তরে”। আওয়াজ ভেসে এল সেই মানুষটার। চমকে উঠেছিলাম। সামনে যে কথা বলছেন কালিকা প্রসাদ। সুন্দর ভাবে বোঝাচ্ছেন “ভগবান তো আমাদের মতো মানুষদের জন্য। আমরা না থাকলে ভগবান, ভগবান থাকবেন কি করে!” বুকের ভিতর ফাঁকা হয়ে গেল। পাশে বসে থাকা ষাটোর্ধ মানুষটি বাচ্চা দের মতো কেঁদে উঠলেন। সামনেই বসে ছোট মেয়েটি যে এতক্ষণ মাতিয়ে রেখেছিল কথাতে। সেও বাবাকে স্ক্রিনে দেখে চুপ করে গেলে। সারা হল এ পা রাখার জায়গা নেই। কিন্তু এই একটা মানুষের উপস্থিতি শান্ত করে দিল রবীন্দ্র সদনকে। একবার শুধু পিছনে তাকালাম যতদূর মানুষের চোখ দেখা গেল বুঝলাম সমুদ্র নেমে এসেছে। তারপর আর সাহস হল না কারোর দিকে তাকানোর।
এই দিন ছিল কালিকাপ্রসাদের জন্মদিন। জন্মদিনও যে মানুষকে কাঁদায় তা উপলব্ধি করলাম এই সন্ধ্যেয়। ফোক কে সামনে আনার কারিগর আজও আছেন পাশে। এই বিশ্বাসটা সকলেরই। নয়ত আজও এত মানুষ সপ্তাহের প্রথমদিন একজায়গায় হয়! দোহার আয়োজন করেছিল এই অনুষ্ঠানের। ছিলেন জয় সরকার, লোপামুদ্রা মিত্রও, শ্রীকান্ত আচার্য, শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার আরও অনেকে। প্রত্যেক মুহূর্তে জানতে পারছিলাম তাঁর গানের পিছনের ঘটনা গুলো। তখনও মনের ব্যথা গ্রাস করেনি সারা মহলকে। কিছু পরেই একে একে এলেন দোহারের শিল্পীরা। চোখের জল বাঁধ ভাঙ্গল। ভাসল কালিকা কন্যাও। দূরে বাবার গলার গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাল সেও। কি জানি কি চলছিল ওই বাচ্চার মনে!
শিলচরে জন্ম এই “মনের মানুষের”। সেইখানেই বড় হওয়া। মাটির গন্ধ তাঁর সারা মনে। পড়াশোনায় বেশ তীক্ষ্ণ। ১৯৯৮ সালে তৈরি হয় “দোহার”। বাংলার লোক গীতিকে নিয়ে কাজ শুরু হয় তাঁর। সময় জেতেই মানুষের মনে জায়গা করে নেন কালিকা প্রসাদ। নিজেকে নয় মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন মাটির রসদ। অস্বীকার করার জায়গা নেই তাঁর কাছ থেকেই এই প্রজন্ম শিখছিল ভালবাসতে লোকগীতিকে। সহসা ঘটল সেই ঘটনা। তিনি হারিয়ে গেলেন “মাটির বুকেই”। “বিসর্জন”এ শেষ কাজ। কে জানত “বিসর্জন” হবে তাঁর।
জানা ছিল না সদা হাস্যময় মানুষটিকে রাখতে মনের পাতায়। কেউ কি ভেবেছিল তাঁর জন্মদিন কাটাতে হবে চোখের জলে। তবে “দোহার” এর সঙ্গে বিশ্বাস আমাদেরও। পাশে আছেন, সঙ্গে আছেন আমাদের কালিকাপ্রসাদ।
(ছবি- “দোহার” ফেসবুক পেজ সৌজন্য)
Facebook Comments