সবচেয়ে বড় পরিসরে বেশি সংখ্যক স্টল এবং প্যাভিলিয়ন নিয়ে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ আয়োজন করা হচ্ছে। এবার বইমেলার সময় বাড়ানো হয়েছে এক ঘণ্টা।
মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির সাহিত্য বিশারদ আব্দুল করিম মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ এর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ।
এ সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সচিব আনোয়ার হোসেন, মেলার প্রধান স্পন্সর বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদের এবারের মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মিডিয়ার কর্ণধার ইলিয়াস কাঞ্চন উপস্থিত ছিলেন।
জালাল আহমেদ বলেন, ‘গতবারের চেয়ে বড় পরিসরে বাংলা একাডেমি এবং তৎসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ শুরু হবে। পাঁচ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে হবে মেলার পরিধি। ১ ফেব্রুয়ারি বিকাল তিনটায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ দেয়া হবে। এরপর মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এবারই মেলায় সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত নয়টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
জালাল আহমেদ আরও বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালীন ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশসহ ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ ৮টি দেশের ১৫ জন কবি, লেখক ও বুদ্ধিজীবী অংশ নেবেন।
জালাল আহমেদ জানান, অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এসব চত্বরের নাম দেয়া হয়েছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে। একাডেমি প্রাঙ্গনে ৯২টি প্রতিষ্ঠানটিকে ১২৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ২৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৫ হাজার ৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মেলায় ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং যারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে বিক্রি ও প্রদর্শন করতে পারবেন। বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রকাশনী সংস্থা ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। তবে বিকাশের মাধ্যমে মেলা থেকে বই কিনলে আরও ১০% কমিশন পাওয়া যাবে।
একাডেমি প্রাঙ্গন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির একটি প্যাভিলিয়ন, চার ইউনিটের দুই, একাডেমির শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং একাডেমির সাহিত্য পত্রিকা মাসিক উত্তরাধিকারের জন্য একটি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গতবারের মত এবারও বইমেলার শিশুচত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রাখা হয়েছে। মাসব্যাপী এই মেলায় এবারও শিশুপ্রহর থাকছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মেলা ও নতুন বইয়ের তথ্য প্রচারের জন্য তথ্য কেন্দ্র থাকছে। সংবাদ কর্মীদের জন্য মিডিয়া সেন্টারও থাকছে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও বই মেলা জুড়ে ফ্রি ওয়াইফাই ইন্টারনেট পরিষেবা থাকছে। মেলার মূল মঞ্চে প্রতিদিন সেমিনার ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মেলার প্রবেশ পথ:
গ্রন্থমেলায় প্রবেশের জন্য টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটি মূল প্রবেশ পথ থাকছে। বাংলা একাডেমিতে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য তিনটি পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য ছয়টি প্রবেশ পথ থাকছে।
নিরাপত্তা:
মেলায় প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ে রাখা হবে। মেলার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালন করবেন। মেলার এলাকাজুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। প্রতিবন্ধীরা যেনো মেলায় এসে ঘুরে ফিরে বই কিনতে পারেন সেজন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিনোদনের জন্য নান্দনিক ফুলের বাগান, বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা এবং দুইটি ক্যান্টিন থাকছে।
মেলায় যত আয়োজন:
২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল চারটায় মূল মঞ্চে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতি-রাজনীতি এবং সমকালীন প্রসঙ্গ নিয়ে এসব সেমিনারে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আলোচনা করবেন। এছাড়াও বিশিষ্ট বাঙালি মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা হবে। প্রতিদিন সংন্ধ্যায় সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্গন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতা থাকছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১৪১টি নতুন বই।
মেলায় নতুন সংযোজন:
গেল বারের চেয়ে এবারের মেলার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। এবারের মেলায় ইউনিট বেড়েছে একশত। এবারই প্রথম বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে বড় পরিসরে নতুন বইয়ের প্রদর্শনশালা থাকছে। এখানে নতুন বই প্রদর্শন করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনের স্টলগুলোতে টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। থাকছে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ওজু ও নামাজের ব্যবস্থা।
মেলার সময়সূচি:
১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (ছুটির দিন ব্যতীত) গ্রন্থমেলা প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। এছাড়াও ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল আটটায় চলবে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমির পরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা আরো আকর্ষণীয় ও নান্দনিকভাবে বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। আমরা চাই বইবান্ধব মেলা করতে। সেজন্য আমাদের সকল প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। এবারই প্রথম বইমেলার সব খবর প্রচার করতে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হচ্ছে (ba21bookfair.com), থাকছে মোবাইল অ্যাপও। মেলার উদ্বোধনী দিনে এই সেবা চালু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বিকাশের সিইও কামাল কাদের বলেন, ‘বইমেলায় যাতে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে বই কিনতে পারেন জন্য বিকাশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কেউ বই কিনে বিকাশে পরিশোধ করলে ৩৫% কমিশন পাবেন। এছাড়াও মেলায় বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা পাঠানো ও আনার ব্যবস্থা থাকছে।
নিরাপদ কমিউনিকেশনের কর্ণধার ইলিয়াস কাঞ্জন বলেন, আমরা দ্বিতীয়বারের মত বইমেলার পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করবো আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে মেলাকে সফল করতে। আপনার আমাদের সমালোচনা না করে গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন।
ছবি : হোয়াটস নিউ লাইফ
Facebook Comments