তার সুর আজও মনের মণিকোঠায় গাঁথা হয়ে আছে অসংখ্য সঙ্গীতপ্রেমীর। তার সুরের মূর্ছনায় মূর্ছিত হয়েছে আসমুদ্রহিমাচল। ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত গায়ক-গায়িকাই তার সুরে গান গেয়েছেন। তিনি কল্যান সেন বরাট। সম্প্রতি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ৫০ বছর পুর্ন করলেন কল্যান বাবু। সেই উপলক্ষ্যেই গতকাল সন্ধ্যায় রবীন্দসদনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক অসামান্য সঙ্গীত সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানে কল্যান বাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, হৈমন্তী শুক্লা, ইন্দ্রাণী সেন, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, রুপঙ্কর, জোজো, জয় হাজরা, মনোময় ভট্টাচার্য, ঝুমকি সেন সহ একঝাঁক গুনি শিল্পীরা। এছাড়াও ছিলেন কল্যান বাবুর অসংখ্য গুনমুগ্ধ ভক্তরা। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নিজের পঞ্চাশ বছরের জার্নির কথা বলতে গিয়ে আবেগে ভাসলেন কল্যান বাবু। কল্যান বাবু নিজের মুখেই স্বীকার করলেন তিনি ছোটবেলায় অসম্ভব ডানপিটে ছিলেন। নিজেদের বাড়ীর দোতলায় ওঠার জন্য কোনোদিন সিঁড়ির প্রয়োজন বোধ করতেন না কল্যান বাবু। পাইপ ধরে উঠতেই সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন তিনি।
এহেন ডানপিটে কল্যান বাবু যে ভবিষ্যতে ভারতবর্ষের একজন খ্যাতনামা সঙ্গীত পরিচালক হয়ে উঠবেন তা তিনি নিজেও ভাবেননি। সেক্ষেত্রে কল্যান বাবু ধন্যবাদ জানালেন তার দূর সম্পর্কের জামাইবাবু ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যকে। কল্যান বাবুর বাড়িতে প্রথম থেকেই সঙ্গীতের পরিবেশ থাকলেও, তাদের বাড়িতে প্রথম হারমোনিয়ামের প্রবেশ ঘটে এই ধনঞ্জয় বাবুর হাত ধরেই। আর সেখান থেকেই পথ চলা শুরু কল্যান বাবুর। তার পর বাকিটা ইতিহাস। এদিনের অনুষ্ঠানে কল্যাণ বাবুকে দরাজ প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন বিখ্যাত গায়িক হৈমন্তী শুক্লা। তিনি জানালেন, “সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও কল্যাণের কোন তুলনা হয় না। ওর কাছ থেকে প্রচুর কিছু শেখার আছে। এবং ওর আরো একটা বড় স্বভাব হল যে ও কোনদিনই কারোর ওপর কিছু চাপিয়ে দেয় না। যেটা অন্য কাউকে ওর শেখাবার আছে সেটা ও মিষ্টি কথায় বুঝিয়ে দেয়”। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না কল্যান বাবুর স্ত্রী।
শারীরিক অসুস্থতার কারনে তিনি এই সন্ধ্যায় আসতে পারেননি। নিজের জীবনে তার স্ত্রীর অবদানের কথা বলতে গিয়ে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়লেন কল্যান বাবু। জানালেন, “সেই ৬৬ সাল থেকে ওর সাথে আলাপ। আমার জীবনের চলার পথের প্রত্যেকটা সিঁড়ি ওর চেনা। তাই যখন ও কাছে থাকেন এবং ওর শারীরিক অসুস্থতার খবর পাই তখন একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি বৈকি”। বলেই দু-চোখ বেয়ে গড়িয়ে আসা অশ্রু সকলের অলক্ষে মুছে নিলেন কল্যান বাবু।
ছবি সৌজন্যে- কোয়েল পাল সিনহা
Facebook Comments