ভাঙনের কবলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনী দ্বীপ। ঘরছাড়া হাজার খানেক পরিবার। নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছে দ্বীপের ২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বালিয়াড়া ও কুসুমতলা। প্রশাসনের সাহায্যের আশায় গ্রামবাসীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একাংশ ডুবে যেতে পারে। ফলে হারিয়ে যাবে সুন্দরবনের ছোট-বড় ১০২টি দ্বীপ।
‘মৌসুনী দ্বীপ’ দক্ষিণ ২৪পরগনার সুন্দরবন এলাকার একটি বদ্বীপ। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৭হাজার। দ্বীপের ৪টি মৌজা মৌসুনী, বাগডাঙা, কুসুমতলা ও বালিয়াড়া। মৌজা গুলিকে ঘিরে রেখেছে চিনাই নদী, বটতলা নদী। মৌসুনীর সীমানা শেষ দক্ষিণে, সেখান থেকেই শুরু বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ। এরমধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন বালিয়াড়া মৌজা। ছোট্ট মৌজায় ২৪ ঘণ্টায় দু’বার নোনা জলের যাতায়াত। নোনা জল বেশি বিপদে ফেলছে বালিয়াড়া অঞ্চলকে। ২০০৯ সালে ‘আয়লা’ বিপর্যয়ের পর থেকে সেখানকার কিছু অংশে চাষবাস বন্ধ। ২০০৫ এ নাবার্ড চুক্তিতে নদীবাঁধের কাজ শুরু হয়েছিলো, কাজ এগিয়েছিল বেশ কিছুটা, তারপরেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলত, কিছুটা অংশের পুরনো ভাঙা এবং আধভাঙা বাঁধ দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনের ঢেউয়ের আঘাতে আরও ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে সেই বাঁধ।
মৌসুনীর উত্তর-দক্ষিণে ঢালাই বাঁধ। বিপর্যয়ের দিনগুলিতে ঢালাই বাঁধে মানুষজনের চলার রাস্তায় স্থানীয়রা বাধ্য হন গবাদি পশুকে বেঁধে রাখতে। যে জমিতে মানুষের ঘর ছিল, পুকুর ছিল, ধানচাষের জমি ছিল, প্রতিদিনের নোনা জলের ঢেউয়ের আঘাতে সব নষ্ট হয়েছে। অস্থায়ী ঘর বানিয়ে কোনক্রমে মাথা গুঁজে রয়েছেন। চাষের ফলনও সেভাবে হচ্ছে না। ফলত, ক্ষতিগ্রস্ত, বিপন্ন এই মৌজা। একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও যাতায়াত এবং নদী পারাপারের অসুবিধার জন্য কোন ডাক্তারই এখানে স্থায়ীভাবে থাকছেন না। মৌসুনীবাসীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
দ্বীপের ৪টি মৌজার মানুষজন বাগডাঙা থেকেই খেয়া পেরিয়ে দক্ষিণ দুর্গাপুর যেতেন নিজের নিজের কাজে। দক্ষিণ দুর্গাপুরের দিকে নদীতীরে পলি জমে যাওয়ায় ফেরি নৌকার যাতায়াত পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। পলিমাটি সরিয়ে রাস্তা মেরামত করে আবার ফেরি চালু করার ব্যবস্থা করা হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁরা জানান, এখন বাগডাঙা বাজার থেকে শাসমল ঘাট ও দক্ষিণ দুর্গাপুর, খিরিশতলা খেয়া পার হতে যাত্রীদের আধঘণ্টার বেশি সময় লাগে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় শাসমলঘাট থেকে দক্ষিণ দুর্গাপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত ৬কিমি রাস্তা করার অনুমোদন পায়। কিন্তু ঐ রাস্তা ৬কিমি না করে ৫কিমি করা হয়। ১কিমি রাস্তা না হওয়ার জন্য খেয়া পারাপারের সমস্যা রয়েই গেছে। দু’পারের মানুষ নিজেরা উদ্যোগী হয়ে অসম্পূর্ণ রাস্তা তৈরি করলেও খেয়া পারাপারের অনুমোদন মেলেনি এখনও। স্থানীয়রা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন, যদি খেয়া পারাপারের অনুমতি মেলে। চিকিৎসার প্রয়োজনে অসুস্থদের চটজলদি ভাল কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে এই নদী পারাপারের অনুমোদন বিশেষভাবে প্রয়োজন। কৃষিজীবীদের জিনিসপত্র নিয়ে ঘুরপথে যেতে সমস্যায় পড়ছেন। মৌসুনী দ্বীপের সামগ্রিক উন্নয়ন, পরিবহণ ব্যবস্থা সহজতর করতে এই ফেরি ব্যবস্থা দ্রুত চালু হওয়া দরকার। অথচ স্থানীয় প্রশাসন এব্যাপারে নির্বিকার বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ক্রমশ নদীর গ্রাসে তলিয়ে যাবে এই দ্বীপ।
ছবি সৌজন্যেঃ উমা শঙ্কর মণ্ডল
Facebook Comments