শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের কাছে কীভাবে আরোও আনন্দদায়ক করে তোলা যায় তার চেষ্টা চলছে গোটা বিশ্বজুড়ে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যাল-য়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক শিক্ষা কর্মশালায় যোগ দিয়ে গোটা দেশকে গর্বিত করলেন ভারতের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের বাছাই করা প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আর এই প্রতিনিধি দলে মেদিনীপুর টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড.বিবেকানন্দ চক্রবর্তী-র উপস্থিতিতে বিশেষভাবে গর্বিত হলো গোটা বাংলা তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। সিলভারজোন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ১০ জনের একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করলেন একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা কর্মশালায়। পৃথিবী বিখ্যাত ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি হলে আয়োজিত এই কর্মশালার বিষয় ছিল ‘মডার্ন এডুকেশন এন্ড টেকনিকস্“। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের নয়টি বিদ্যালয়ের প্রধানকে এই কর্মশালায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শতাব্দী প্রাচীন হেরিটেজ বিদ্যালয় টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত জাতীয় শিক্ষক ও রবীন্দ্র গবেষক ড.বিবেকানন্দ চক্রবর্তী, গুরগাঁওয়ের জিডি গোয়েনকা পাবলিক স্কুলের প্রধান অনুরাধা হান্ডা, মুম্বাইয়ের প্রজ্ঞা বোধিনী হাই স্কুলের ট্রাস্টি ড.নীতা মাথরে, রেওয়ারীর আর পি এস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান প্রীতি লাম্বা, ধারুহেরার আর পি এস পাবলিক স্কুলের প্রধান ড. রমনপ্রীত কাউর শেখন, মুম্বাইয়ের প্রজ্ঞা বোধিনী হাইস্কুলে প্রধান সীমা ছোটু শেখ, নাসিকের উইসডাম হাই ইন্টার ন্যাশানাল স্কুলের প্রধান সালিনী কাদুয়ে, হরিয়ানার আর পি এস সিনিয়র সেকেন্ডারী স্কুলের প্রধান সরিতা বিনোদ কুমার সিং, রাজস্থানের এল কে সিংহানিয়া এডুকেশন সেন্টারের প্রধান রমেশ চন্দ্র যোশী।
এছাড়াও সিলভারজোন ফাউন্ডেশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নকুল ভাটনগর। এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ স্টিভ গার্ণেট ও ড.টমাস ফেয়ারহেড। কর্মশালায় মূল বিষয় ছিল আধুনিক পৃথিবীতে বিদ্যালয় শিক্ষায় শ্রেণি শিখন কেমন হবে এবং তাকে কীভাবে সৃজনশীল ও আনন্দময় করে তুলে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করা যাবে এবং উদ্বুদ্ধ করা যাবে। গত ১৬ অক্টোবর ট্রিনিটি হলে এই কর্মশালা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে আধুনিক শ্রেণি শিখন নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেন দুই বিদগ্ধ প্রশিক্ষক। দ্বিতীয় পর্বে নয়জন ভারতীয় বিদ্যালয় প্রধান অংশগ্রহণ মূলক শিখন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি নয়জন প্রধান শিক্ষকই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তাঁদের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক উপলব্ধি তুলে ধরেন।
সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যোগদানকারী হাতে স্মারক ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। সিলভারজোন ফাউন্ডেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কমল কিশোর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বজুড়ে শিক্ষার প্রকরণ এবং পদ্ধতি নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। একবিংশ শতকে সমগ্র পৃথিবীর শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদে ও হাতে কলমে অবগতির লক্ষ্যে এবং স্বদেশে তার প্রয়োগ ঘটানো উদ্দেশ্যে আমরা সারা ভারত থেকে নয়জন যশস্বী প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাকে বেছে নিয়ে ছিলাম।এই নয়জন প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকা ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির সাথে নিজেদের যুক্ত রেখে সমগ্র বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করবেন, এই আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা।’ এই ধরনের কর্মশালায় নিজেদেরকে যুক্ত করতে পেরে অংশগ্রহণকারী প্রধানরা গর্বিত, আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। কর্মশালায় বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র প্রতিনিধি মেদিনীপুর টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড.বিবেকানন্দ চক্রবর্তী জানান, ‘১২৯০ খ্রীস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় গুলির মধ্যে অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১১৮ জন নোবেল পুরস্কার প্রাপক গোটা বিশ্বের গৌরব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন প্রাক্তনী বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেছেন। এছাড়াও এখানকার অগণিত ছাত্র গোটা বিশ্বকে শিক্ষাজগৎ সহ নানান দিক থেকে আলোকিত করেছেন। এমন একটি গৌরবময় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ট্রিনিটি হলে উপস্থিত থেকে এবং এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ জীবনের একটি উজ্জ্বল ও স্মরণীয় মুহূর্ত। পাশাপাশি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শংসাপত্র লাভ জীবনকে আরো মহিমান্বিত করলো। অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই সিলভারজোন ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে।’ সংশ্লিষ্ট মহলের আশা সিলভারজোন ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ দেশের বিদ্যালয় শিক্ষাক্ষেত্রে লাভদায়ক হবে।
ছবি সৌজন্যে – সিলভারজোন ফাউন্ডেশন ও ড.বিবেকানন্দ চক্রবর্তী সৌজন্যে
Facebook Comments