প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর মানসিক দৃঢ়তা যে মানুষকে সাফল্যের পথে পৌঁছে দেয় তা প্রমাণ করলেন নদীয়ার জ্যোতিষ্ক বিশ্বাস। করিমপুরের বাসিন্দা ২২ বছরের এই সাহসী তরুণ একক সাইকেল অভিযান করে ট্রান্স-হিমালয়ান সফর শেষ করলেন। পৃথিবীর তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে অনন্য এই নজির গড়লেন তিনি।
শুধুমাত্র নিজের সাইকেল আর প্রয়োজনীয় লটবহর নিয়ে জ্যোতিষ্ক অভিযান শুরু করেন গত ১২ মে। ১৭৬ দিনে মোট ৭,৮৯১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গত ৩ নভেম্বর অভিযান শেষ হয়েছে তাঁর। প্রায় মাস ছয়েকের মধ্যে ট্রান্স হিমালয়টা পশ্চিম থেকে পূর্বে আড়াআড়ি ভাবে অতিক্রম করেছেন তিনি। কলকাতা থেকে প্রথমেই পাড়ি দিয়েছিল বেনারস, সেখান থেকে লখনউ, আগ্রা, মথুরা, দিল্লি, জলন্ধর, জম্মু, শ্রীনগর, সোনমার্গ, কার্গিল লেহ- লাদাখ হয়ে খারদুংলায় পৌঁছান। সেখান থেকেই শুরু হয় মূল ট্রান্স-হিমালয়ান ট্রেল। মানালি, গাড়োয়াল, নেপাল, উত্তরবঙ্গ, অসম হয়ে অরুণাচল প্রদেশের পাসিঘাটে এসে শেষ হয় যাত্রা। পেরোতে হয়েছে দশখানা গিরিখাত।
ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণের শখ জ্যোতিষ্কর। স্বপ্ন দেখেন দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজে সাইকেল চালানোর। বাবা-মা তো বটেই, তবে মাস কমিউনিকেশনের ছাত্র সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন এভারেস্ট জয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্তকে দেখে। প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে অভিযানে। বেশকিছুটা এসেছে বিভিন্ন সংস্থার থেকে, কিছুটা জ্যোতিষ্ক নিজেই জোগাড় করেছেন। অভিযানের অর্থ সংগ্রহের জন্য শখের ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবেও করতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। অভিযানের প্রথম দিন থেকেই নিজের সফরের প্রায় সব খুঁটিনাটি খবরাখবর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন জ্যোতিষ্ক। জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে তাঁর। বিদেশিরাও তাঁকে নানাভাবে সাহায্যও করেছেন। দীর্ঘ পথে অভিযানের স্মৃতিটা সবসময় মধুর হয়নি। টানা সাইক্লিংয়ের ফলে শেষমেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতিষ্ক। সফরের মাঝে একবার সাইকেল চালাতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়েও যান। একা থাকায় বেশ কয়েকবার সমস্যাও হয়েছিল। নিজের ওজনের প্রায় অর্ধেকটা হারিয়েও দমে যাননি অ্যাডভেঞ্চার পাগল এই তরুণ।
জ্যোতিষ্ক এখন রয়েছেন অসমের ডিব্রুগড়ে। আর কয়েকদিন পরেই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে। পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব মহলে ইতিমধ্যেই উৎসবের মেজাজ। দু’চাকায় জড়িয়ে থাকা অভিযানের গল্প, কথা শোনার জন্য দিন গুণছেন তাঁর পরিজনরা। নজির গড়ে বিশ্বের দরবারে নিজের গ্রামকে পরিচিতি দিয়েছেন। দীপাবলীর আগেই সাফল্যের আলোর রোশনাই ছড়িয়ে দিয়েছেন নদীয়ার জ্যোতিষ্ক।
ছবি – জ্যোতিষ্ক বিশ্বাসের ফেসবুক
Facebook Comments