ঠিক একদিন আগে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে কাশ্মিরের পাকিস্তান অংশে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থন পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিল্লি। এর অংশ হিসেবে হামলার একদিনের পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে পরিচিত চীনে উড়াল দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেখানে তিনি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পুলওয়ামা হামলা নিয়ে আলোচনা করেন।
রাশিয়া, ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ১৬তম সম্মেলনে অংশ নিতে সুষমা স্বরাজের এ সফর।
সফরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঝি-র সঙ্গে সাক্ষাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতীয় বিমান হামলার পক্ষে আওয়াজ তোলেন সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমন করতে পাকিস্তান কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে ভারত। একইসঙ্গে পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে ভারতের নাগরিকদের মধ্যে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সেটাও তুলে ধরেন সুষমা। তিনি বলেন, ফের হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান তাদের দেশে থাকা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু তাই নয় জঙ্গিদের উপস্থিতির কথাই মানতে চায়নি ইসলামাবাদ। দিল্লির কাছে খবর ছিল, আবার নতুন করে আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছে জয়েশ-ই-মুহম্মদ। এমতাবস্থায় তাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। আর এই হামলায় যাতে কোনওভাবেই সাধারণ মানুষের মৃত্যু না হয় তাও বিবেচনায় রাখা হয়েছিল।
সুষমা স্বরাজ বলেন, দিল্লি উত্তেজনা আর বাড়াতে চায় না। ভারত দায়িত্বশীল দেশের ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, আমি এমন একটা সময়ে এখানে কথা বলতে এসেছি, যখন ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পুলওয়ামার চেয়ে বড় হামলা আর কখনও হয়নি।
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলা নিয়ে কথা বলেন। এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মতো প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে।
ভারতের সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ফোনালাপে সুষমা স্বরাজ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে জানিয়েছেন, কেন ভারতকে এই হামলা চালাতে হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ভারত শুধু জয়েশ-ই-মুহম্মদের ঘাঁটিকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের’ গাড়ি বহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বাহিনীটির অন্তত ৪০ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বোমাবর্ষণ করে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।
সূত্র: এনডিটিভি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
Facebook Comments