দলে যাবে রেফ্রিজারেশন, গ্যাসের বদলে আসছে পারমাণবিক ফ্রিজ
১৯ শতকের গোড়ার দিকের এক প্রযুক্তির কল্যাণে রীতিমতো বদলে গিয়েছিল তৎকালীন পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। ফ্রেয়ন গ্যাসের আবিষ্কার যেকোন বস্তুর পচন রোধে সেসময় অসামান্য এক বার্তা নিয়ে এসেছিল। কিন্তু এরই সাথে সাথে নতুন এক সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে যা বিগত ১০০ বছরে পৃথিবীকে নিয়ে এসেছে আরেক হুমকির মুখে। আপনার নিত্য ব্যবহার্য ফ্রিজ এবং এসিতে ক্রমাগত কাজ করতে থাকা ফ্রেয়ন গ্যাস আপনার অজান্তেই আপনার ভবিষ্যৎ প্রন্মের এপিটাফ লিখছে ক্রমাগত। ফ্রেয়ন এবং সিএফসি গ্যাস প্রতিনিয়ত বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয় করে পৃথিবীকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে।
গ্রীন হাউজ গ্যাস হিসেবে বেশ অনেক আগেই সমালোচনার মুখে পড়েছিলো রেফ্রিজারেটরের সিএফসি গ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের চাওা ছিল নতুন কোন কুলিং এজেন্ট এর আবিষ্কার করা যা একই সাথে ফ্রেয়ন বা সিএফসি গ্যাসের বিকল্প হবে। সেই সাথে হবে পরিবেশ বান্ধব। দীর্ঘ গবেষণার পর এবার হয়ত সে পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
জেনে অবাক হতে পারেন, বর্তমান বিশ্বে মোট উৎপাদিত বিদ্যতের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী চালু থাকা কোটি কোটি ফ্রিজের পেছনে। গ্যাসের কম্প্রেশন এবং ডিকম্প্রেশনের মাধ্যমে মূলত পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। যেকোন বস্তু ঠান্ডা করার সময় এই প্রক্রিয়া বারবার চলতে থাকে ফ্রিজের ভেতর। কিন্তু প্রতিবার ফ্রিজ খোলার সাথে সাথে আপনি বেশ কিছু গ্যাস ফ্রিজের বাইরে বের করছেন যা ডেকে আনছে ভয়াবহ ক্ষতি।
ফ্রিজ যেভাবে কাজ করে
গ্যাস কম্প্রেশন এবং ডিকম্প্রেশন প্রক্রিয়া মূলত চারটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
১। প্রবল চাপে (কম্প্রেশন) গ্যাসকে তরলে পরিণত করা হয়।
২। উত্তপ্ত কিছুর সংস্পর্শে এলে (যেমন – ফ্রিজে রাখা খাবার) এই তরল তাকে কক্ষ তাপমাত্রায় নিয়ে থাকে।
৩। তরল হয়ে থাকা উপাদান তাপ শোষণ করে ডিকম্প্রেশনের মাধ্যমে আবার গ্যাসীয় উপাদানে পরিণত হয়।
৪। গ্যাসীয় পদার্থ আবার চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত হয়ে ১ম প্রক্রিয়া থেকে আবার কাজ শুরু করে।
ধারণা করা হয়, এক কিলোগ্রাম রেফ্রিজারেশন গ্যাস প্রায় দুই টনের সমান কার্বন ডাই অক্সাইডের মত ক্ষতি করে থাকে। যা একটি গাড়ি টানা ছয়মাস কালো ধোঁয়া ছাড়ার সমান। আর তাই গ্যাস নির্ভর ফ্রিজের শেষোটা এখনই দেখতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। আগামী দিনে ফ্রিজ হবে পরিবেশ বান্ধব পারমাণবিক উপায়ে।
আ্যটোমিক ফ্রিজ এবং কাজের ধারা প্লাস্টিক ক্রিস্টাল টেকনোওলজিতে পরিচালিত এটমিক ফ্রিজ পরিচালইত হবে গ্যাসীয় ফ্রিজের মত করেই। তবে এবার সেটি হবে আ্যটোমিক বা আণবিক অনুপাতে। আর গ্যাসকে তরলে পরিণত করার বদলে এটি প্লাস্টিক ক্রিস্টালের গঠন পরিবর্তন করা শীতলীকরণে অংশ নিবে। কিন্তু শীতল হবে কিভাবে?
এবারে সাহায্য করবে পদার্থবিজ্ঞানের এনট্রপি বিষয়ক ধারণা। যে তাপমাত্রায় পরমাণু নিজস্ব কক্ষপথে এক স্তর থেকে অন্যস্তরে অবস্থান পরিবর্তন করে তাকে এনট্রপি বলে। চাপ প্রয়োগের আগে পরমাণু তার নির্ধারিত জায়গাতেই ক্রমাগত আবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু চাপ বাড়লেই পরমানু উচ্চস্তরে পৌছে গিয়ে নতুন এক কেলাস বা ক্রিস্টাল আকৃতি ধারণ করে। আবার চাপ সরিয়ে নিতেই পরমাণু আগের অবস্থানে ফিরে আসে। আর এই এনট্রপি জনিত পরিবর্তনেই চলতে থাকবে ফ্রিজের শীতলীকরণ প্রক্রিয়া।
এই শীতলীকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম আবিষ্কারক ড.মোল বলেন, ‘এনট্রপি জনিত এই বিশৃঙ্খলা আর অস্বাভাবিকতাই শীতল প্রক্রিয়ার মূল।’ যদিও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাপক সময়ের প্রয়োজন। বায়বীয় পদার্থের আয়তন জনিত সমস্যা না থাকলেও ক্রলাসিত করার ক্ষেত্রে কঠিন পদার্থে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে পদার্থের সীমিত আয়তন। সে নিয়েই আপাতত বিস্তারিত গবেষণা চালাচ্ছেন নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এবং এই পরিকল্পনার আবিষ্কারক ড.মোল এবং ড.ইউ।
তথ্য সৌজন্যে : এবিসি ডট নেট ডট এইউ
Facebook Comments