কেউ কারও মুখ দেখা-দেখি ছিল না। একে অপরকে দেখলে প্রকাশ পেত গা-জ্বালানো ভাব। দু-এক বছর নয়, দীর্ঘ ২৪ বছর। সেই সাপে নেউলে সম্পর্ক ভুলে ফের একমঞ্চে মুলায়ম সিং যাদব ও মায়াবতী। সাইকেলের সওয়ারি ‘ভাই’ মুলায়মের হয়ে ভোট চাইতে হাজির হাতির চালক ‘বোনজি’ মায়াবতী।শুক্রবার উত্তর প্রদেশের মইনপুরীতে মহাজোটের নির্বাচনী সভায় দেখা মিলল এ বিরল চিত্র। ১৯৯৫ সালের পর এ দৃশ্য আর দেখা যায়নি। রাজনীতি যে সব সম্ভাবনার শিল্প, সেটা আবারও প্রমাণিত হল। অতীতের তিক্ততা ভুলে মুলায়মের গলায় আবেগের সুর, ‘আমি শেষবার লড়ছি। আমাকে ভোট দিন, জয়ী করুন। আমি মায়াবতীর কাছে কৃতজ্ঞ।’
পাল্টা মায়া জানালেন, ‘মুলায়ম যাদব পিছিয়ে পড়া জাতির আসল নেতা। নরেন্দ্র মোদির মতো ভুয়া নন।’ খবর এনডিটিভির। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মোদিকে হটাতে উত্তর প্রদেশে মহাজোট বেঁধেছে সমাজবাদী পার্টি (সপা) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা)। এবারের ভোটে সপা দলের নেতৃত্ব মুলায়মের বড় ছেলে অখিলেশের হাতে। সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনিও। এদিন প্রচারের শুরুতেই ভাষণ দেন সপার সাবেক প্রধান মুলায়ম। তিনি বলেন, ‘মায়াবতীজিকে অনেক ধন্যবাদ সভায় যোগ দেয়ার জন্য। সময়ের দাবি মেনে উনি সপার হাত ধরেছেন। ওনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
বক্তব্যে এ বর্ষীয়ান নেতা আবেগতাড়িত ছিলেন। সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘শেষবার আমি লড়ছি। বেশি ভোটের ব্যবধানে আমাকে জেতান আপনারা।’নেতাজির পরই মঞ্চে ওঠেন মায়াবতী। মুলায়মের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মোদির সমালোচনা করে মায়াবতী বলেন, ‘কেন্দ্রে যে সরকার চলছে সেটা সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী। দেশ আজ গভীর সংকটের মুখোমুখি। তাই আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে একটাও ভোট দেবেন না। ভোট দিন পিছিয়ে পড়া জাতির কাজে যিনি সমগ্র জীবন দিয়ে কাজ করলেই সেই মুলায়মকে। মোদি ভুয়া নেতা। আম আদমির আসল নেতা মুলায়ম সিং যাদব।’কংগ্রেস চাইলেও মহাজোটে নেয়া হয়নি রাহুলের দলকে। তবে আগামী দিনে সর্বভারতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখে রাহুল ও সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী কেন্দ্র আমেঠি ও রায়বেরেলিতে কোনো প্রার্থী দেয়নি ‘বুয়া-ভাতিজা’। তাতে অবশ্য প্রচারে ছেড়ে কথা হচ্ছে না। এদিন কংগ্রেসের ‘ন্যায়’ প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করে মায়াবতী বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া সমাজের ভোটারদের প্রভাবিত করতেই ন্যায় প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। আসলে এ প্রকল্প একটা ভাঁওতাবাজি।’ তৃতীয় পর্বে আগামী ২৩ এপ্রিল মইনপুরী আসনে ভোট হবে। এখানে মুলায়মের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রেম সিং সাক্ষ্য।
১৯৯৫ সালের ২ জুন লখনৌর গেস্ট হাউসে সপার সঙ্গ ত্যাগ করে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়েন মায়াবতী। রাজ্যে ক্ষমতায় তখন মুলায়ম। রাজ্য নিশ্চিত হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে গেস্ট হাউস ঘিরে ফেলে তার বাহিনী। আটকা পড়েন মায়াবতী। কোনো মতে বিজেপি বিধায়ক দত্ত দ্বিবেদীর মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসেন। গেরুয়া দলের সমর্থনে ৩ জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন মায়াবতী। ক্ষমতায় এসেই মুলায়মের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ঠুকে দেন। এ ঘটনাই উত্তর প্রদেশের ইতিহাসে বিখ্যাত গেস্ট হাউস-কাণ্ড বলে পরিচিত। ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা রজনীকান্তের : লোকসভা নির্বাচনের মাঝেই বিধানসভা নির্বাচনে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন তামিলনাড়ুতে সুপারস্টার অভিনেতা রজনীকান্ত। বললেন, তামিলনাড়ুর নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেই ভোটে দাঁড়াবেন তিনি। শুক্রবার নিজের বাসভবনের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা বলেছেন রজনী। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, যদি এআইএডিএমকে (জয়ললিতার দল) সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় ও সরকার পড়ে যায়, সেক্ষেত্রে ২৩ মে’র পর তিনি কী করবেন? বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ুর ৩৮টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের পাশাপাশি রাজ্যের ১৮টি কেন্দ্র উপনির্বাচনও হয়েছে। তার ফলাফল বের হবে ২৩ মে। সেদিনের ফলাফলের ওপর অনেককিছু নির্ভর করবে।
Facebook Comments