করলা নামটি শুনেও অনেকে নাক কুঁচকে ফেলেন। তেতো স্বাদের এই সবজিটি কী করে খায় মানুষ! এমনও বলেন অনেকে। আবার কেউ হয়তো খুব শখ করেই খান করলা। করলা খাওয়া যায় নানাভাবে। ভাজা, সেদ্ধ কিংবা তরকারিতে করলা আলাদা স্বাদ নিয়ে আসে। অনেকে পছন্দ না করলেও এই করলার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যগুণ। এই তেতো সবজিটির পুষ্টিগুণই একে খাবার টেবিলে জায়গা দিয়েছে। তো কী রয়েছে এই করলার মধ্যে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
করলার পুষ্টিগুণ :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে করলার রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি এর উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া এতে আরও আছে বিটা ক্যারোটিন, জিঙ্ক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ও লুটেইনের মতো পুষ্টি উপাদান। ১০০ গ্রাম ওজনের একটি করলার মধ্যে রয়েছে খাদ্যশক্তি ১৭ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটস ৩.৭০ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ফাইবার ২.৮০ গ্রাম, ফোলেট ৭২ মাইক্রো গ্রাম, নিয়াসিন ০.৪০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৪৭১ আইইউ, ভিটামিন সি ৮৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৯৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম। এত পুষ্টিগুণের করলা মানব শরীরের জন্য বেশ কিছু উপকার করে।
শ্বাস কষ্ট রোধ :
করলার রসে এমন কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের অনেক টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদানকে দূর করে। যাদের শ্বাস কষ্টের মতো অসুখ আছে তাদের জন্য করলা বেশ উপকার করে। পানির সঙ্গে করলার রস আর মধু মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট, ব্রংক্রাইটিস কিংবা গলার প্রদাহে অনেক আরাম পাওয়া যায়।
তারুণ্য বাড়ায় :
তারুণ্যকে ধরে রাখতে সবারই অনেক চেষ্টা থাকে। কিন্তু নানান রোগবালাই আর শরীরের মেদ তা আর হতে দেয় কই! করলা তারুণ্য ধরে রাখতে বেশ উপকারী। এটি রক্তচাপ এবং চর্বি কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। সেই সাথে দৃষ্টিশক্তিকেও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। শরীরে জমে থাকা ভাইরাস দূর করতে করলার গুণের শেষ নেই। শরীরকে ঝরঝরে করে তুলতে প্রতিদিন করলার জুস পান করুন। এতে শরীরের মধ্যে বয়সের ছাপ পড়বে না। নিজেকে আবিষ্কার করবেন আরও তরুণ, আরও সবল হিসেবে।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে :
করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং আঁশ। এছাড়াও করলায় এমন একটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরে ক্যানসার রোধে ভূমিকা পালন করে। লাইকোপিন নামের এই উপাদানটি খুব কম খাবারেই পাওয়া যায়। এজন্যই সারা বিশ্বের মানুষের কাছে করলা একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবেই পরিচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যানসার এবং অগ্নাশয়ের ক্যানসার নিরাময়ে করলার রস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে :
মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে যে কয়েকটি পুষ্টি উপাদান কাজ করে তারমধ্যে একটি হলো লুটিন। করলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে লুটিন রয়েছে যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধের কোষগুলোকে সক্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে।
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায় :
রক্তের মধ্যে যে চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে ফেলে দ্রুত। সেই সাথে বাড়িয়ে তোলে উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা। এর ফলে শরীরের রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত করলা খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। হার্ট ভালো থাকে। সেই সাথে কমে হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা।
চুলের যত্নে :
চুলের নানান যত্নে করলার বিশেষ উপকার লক্ষ করা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই করলার ব্যবহার হয়ে আসছে চুলের যত্নে। করলার রস দইয়ের সাথে ব্যবহার করলে চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। চুলের ডগা ফেটে যাওয়ার সমস্যা থেকে উদ্ধার করে করলা। সপ্তাহে একবার কাঁচা করলার প্রলেপ দিলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চুল পড়া বন্ধ করতেও করলা বেশ উপকারী। এ ক্ষেত্রে করলার রসের সাথে অল্প পরিমাণ চিনি মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
Facebook Comments