একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে পুরোপুরি বিধ্বস্ত এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। গত রবিবারের (২১ এপ্রিল) নির্মম সেই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জন বিদেশিসহ অন্তত তিন শতাধিক নিহত এবং অসংখ্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
যদিও দেশটির গির্জা-হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো সেই হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জড়িত বলে ইতোমধ্যে আভাস পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসের নিজস্ব একটি বার্তা সংস্থা সোমবার (২২ এপ্রিল) তিন আত্মঘাতী হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করেছে।
যেখানে তাদের প্রত্যেকের ছবির পেছনে আইএসের পতাকা রাখা আছে। সেই তিন হামলাকারী হলেন- আবুল মুখতার, আবুল বাররা এবং আবু উবায়দা।
এদিকে ছবিতে জাতীয় তাওহিদ জামায়াতের (এনটিজে) হামলাকারী জাহরান হাসিন রয়েছেন, যাকে এরইমধ্যে আবু উবাইদা নামে শনাক্ত করা হয়েছে। যেখানে কেবল উবাইদাকেই মুখোশহীন অবস্থাতে দেখা গেছে। যে কারণে এখন বাকিদের আসল পরিচয় অনুসন্ধানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রীলঙ্কার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভয়াবহ এই হামলার প্রেক্ষিতে সশস্ত্র সংগঠন আমাকের মতো আইএস যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করেছে; তাতে এর সঙ্গে সংগঠনটির জড়িত থাকার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে গেছে। যদিও এখন এর সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এরইমধ্যে তাদের প্রকাশিত এসব ছবি তদন্তের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
যদিও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, আবু বকর আল বাগদাদির আনুগত্য প্রকাশের পর হামলাকারীদের একটি ডাক নাম দেয়া হয়। যেটি মূলত তাদের শনাক্ত করণের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে এখানে হামলাকারী উবাইদার ছবির পেছনে আইএসের পতাকা থাকায় জাতীয় তাওহিদ জামায়াত (এনটিজে) যে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের একটি অংশ; এবার তারই আভাস পাওয়া গেছে।
অপরদিকে হামলায় আইএসের সমর্থন প্রসঙ্গে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কাটজ এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের সমর্থকরা শ্রীলঙ্কায় চলমান হামলার ব্যাপক প্রশংসা করেছে। একইসঙ্গে তারা এতে অসংখ্য হতাহতের ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছে।’
‘আইএস পরিচালিত এই চ্যানেলে শ্রীলঙ্কায় বিস্ফোরণের বুনো উল্লাস করা হয়েছে। তাছাড়া এটিকে ক্রাইস্টচার্চ হামলার প্রতিশোধ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।’
রিটা কাটজ আরও দাবি করেছেন, ‘অনলাইনে এমন প্রশংসার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে; সম্ভবত জঙ্গি গোষ্ঠীটি এখন হামলার দায় নেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও তাদের এ ধরনের দাবি নিউজিল্যান্ডে হামলার প্রতিশোধ হিসেবেও করা হতে পারে। আর এটা অনেক পরিকল্পিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।’ এর আগে গত রবিবার স্থানীয় সময় সকালে দেশটিতে বসবাসরত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় কলম্বো ও এর আশপাশের এলাকায় থাকা চার্চে প্রার্থনারত লোকদেরসহ আরও বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় এই সিরিজ বোমা হামলা। মূলত এতে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক নিহত এবং পাঁচশর বেশি আহত হন। হতাহত বেশি থাকায় সামনে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।
Facebook Comments