লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঠাসিয়ে গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ মন্তব্যের জেরে বেজায় চটেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এর পরিণাম ভালো হবে না বলে কার্যত মমতাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সাবধান করে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য যখন দুজনের সাক্ষাৎ হবে, তখন যেন লজ্জায় না পড়েন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা ‘সব সীমা লঙ্ঘন করেছেন’ বলেও মন্তব্য সুষমার। তৃণমূলের তরফে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও সুষমার মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন তেজস্বী যাদব। রাজীব গান্ধী সম্পর্কে মোদীর করা ‘ভ্রষ্টাচারী’ মন্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আরএলডি নেতা লালুপুত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে বারবারই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছেন। সেই অভিযোগের জবাবেই মঙ্গলবার (৭ মে) পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির সভায় মমতা বলেন, ‘মোদীবাবুরা যখন বাংলায় এসে বলেন তৃণমূল তোলাবাজ, মনে হয় ঠাসিয়ে একটা গণতন্ত্রের থাপ্পড় দিই। নোট বাতিল করে মানুষের টাকা নিজেদের পকেটে কারা ঢুকিয়েছে? কারা তোলাবাজি করে?’
মমতার এই মন্তব্যের প্রতিবাদেই টুইটারে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন সুষমা স্বরাজ। তিনি লিখেছেন, ‘মমতাজি, আপনি আজ সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছেন। আপনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মোদীজি দেশের প্রধানমন্ত্রী। আগামী দিনে তার সঙ্গে আপনার কথা বলতেই হবে। এই জন্যই উর্দু কবি বশির বদরের কয়েকটি পংক্তি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।’
এরপর ওই লাইনগুলিও উদ্ধৃত করেছেন সুষমা, ‘আপনি যত খুশি রেগে যেতে পারেন, কিন্তু আমি আপনাকে শুধু একটাই অনুরোধ করব, পরে কোনো দিন যদি আমরা কখনো বন্ধু হই, তাহলে সে দিন যেন লজ্জা পাবেন না।’
তবে, প্রধানমন্ত্রী মোদী এর আগে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। সুষমার টুইটের পরই সেই প্রসঙ্গ তুলে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তেজস্বী যাদব। সুষমাকে তার কটাক্ষ, ‘আশা করি আপনি মোদীর (রাজীব গান্ধী সম্পর্কে) বিলো দ্য বেল্ট (ভ্রষ্টাচারী) মন্তব্য শুনেছেন। আপনি ওর (মোদী) চেয়ে বড়, জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ। এই সত্যিটা জানা সত্ত্বেও আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন।’
মোদী যখন রাজীব গান্ধীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, তখন প্রায় সব বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা তার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু, বিজেপির কারও মুখেই সেই মন্তব্যের নিন্দা করা দূরে থাক বরং মৌন সমর্থন করে গিয়েছেন। অমিত শাহ আবার পশ্চিমবঙ্গে এসে সরাসরি সমর্থন করেছেন মোদীর ওই মন্তব্য। এখানেই তেজস্বীর মতোই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, মোদীর মন্তব্য নিয়ে টুঁ শব্দ করলেন না সুষমা, এখন মমতার মন্তব্য নিয়ে কেন এই হুমকির সুর সুষমার গলায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচারে এসে প্রায় প্রতিবারই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবারও অমিত শাহ বলেন, ‘এ রাজ্যে সমস্ত কাজের জন্যই সিন্ডিকেটকে তোলা দিতে হয়। কিন্তু সেই তোলার টাকাও এখন গুণ্ডাদের হাতে পৌঁছায় না। সোজা চলে যায় ভাইপোর কাছে। ভাইপো সেই টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দেন।’ তার জবাবেই মমতা ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ মারার কথা বলেন।
ছবি সংগৃহীত
Facebook Comments