লোকসভা নির্বাচনের পর মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার তৃণমূলের দুই বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
বীজপুরের শুভ্রাংশু রায় ও বিষ্ণুপুরের তুষার কান্তি ভট্টাচার্য দিল্লির বিজেপির কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে যোগ দেন। এ সময় তাদের সঙ্গে হেমতাবাদের সিপিএমের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ও ছিলেন।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিজেপি ভালো ফল করতেই যোগদান-পর্ব শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার একই সঙ্গে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের চারটি পৌরসভার ৮০ শতাংশের বেশি তৃণমূল কাউন্সিলর দলবেঁধে বিজেপিতে যোগ দেন।
চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ কাউন্সিলররা বিজেপিতে যোগ দেয়ায় চারটি পৌরসভাই গেরুয়া শিবিরের হয়ে গেল। এর আগে পশ্চিমবঙ্গে একটি পৌরসভা তো দূরের কথা পঞ্চায়েতও বিজেপির ছিল না। তৃণমূল বিধায়ক ও কাউন্সিলরদের দলে স্বাগত জানিয়ে বিজেপির সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতার দল ভেঙে চুরচুর যাবে।
১ জুনের পর আরও অনেক তৃণমূল বিধায়ক এবং পুরপ্রধান দল ছেড়ে মোদির কাছে আসবেন। তিনি আরও বলেন, সাত দফায় ভোট হয়েছে, এবার সাত দফায় তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে আসবেন সবাই।
বিধায়ক ও কাউন্সিলরদের দল ছাড়া নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, মুকুল রায়ের ছেলে বাবার সঙ্গে যাবেন জেনেই তাকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর তুষার ভট্টাচার্য কংগ্রেসের বিধায়ক, তৃণমূল কংগ্রেসে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। না পেয়ে বিজেপিতে গেলেন।
চার পৌরসভা চলে যাওয়া নিয়ে পার্থ বলেন, টাকা ছড়িয়ে ওই পৌরসভায় বদল ঘটানো হয়েছে। এদিকে, দল ভাঙানোর ‘মাস্টার’ মুকুল রায় বলেছেন, পার্থ চ্যাটার্জি যতই বলুন না কেন এটা নিশ্চিত আগামী তিন চার মাসে ১৫-২০ জন বিধায়ক এবং কয়েকটি পৌরসভা, পঞ্চায়েত বিজেপিতে যোগ দেবে। দু-একজন মন্ত্রীও যোগ দিতে পারেন বলে তিনি দাবি করেন।
লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসন বিজেপি পাওয়ায় খুব চাপে পড়ে গেছেন মমতা ব্যানার্জি। তার ওপর আবার তৃণমূল ভাঙা শুরু হয়ে গেছে।
এক সময়ের মমতার দক্ষিণহস্ত মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেয়ার পরই পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করে। নির্বাচনের আগেই দল ভেঙে দুই তৃণমূল সংসদ সদস্য বিজেপিতে যোগ দেন। তাদের মধ্যে সৌমিত্র খান এবার বিষ্ণুপুর থেকে জিতে ফের সংসদ সদস্য হয়েছেন।
বাংলাদেশের রংপুর লাগোয়া কোচবিহার আসনে তৃণমূল থেকে আসা যুব নেতা নিশিথ প্রামাণিক জিতে বিজেপির সংসদ সদস্য হয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয় ব্যারাকপুর আসনে ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতেই। অর্জুনকে পৌরপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল।
কিন্তু ওই কেন্দ্রে ভোটে জিতে বিজেপির সংসদ সদস্য হয়ে যান অর্জুন। আর এর পরই রাতারাতি এলাকার রাজনীতির রং বদল হতে শুরু করে। সবুজ থেকে গেরুয়া হতে শুরু করে পার্টি অফিসগুলো। আর এদিন তো ওই এলাকারই তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রানসু রায় সদলবলে বিজেপিতে যোগ দিলেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে থাকা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার পৌরসভাগুলোর চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর বিজেপিতে গেছেন।
পৌরসভাগুলো হল- নৈহাটি, কাঁচড়াপাড়া, হালিশহর ও ভাটপাড়া। এর মধ্যে ভাটপাড়ার চেয়ারম্যান আবার সাবেক তৃণমূল বিধায়ক বর্তমানে সংসদ সদস্য অর্জুন সিং। এ চার পৌরসভায় তৃণমূল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। নৈহাটি পৌরসভার ৩১ জনের মধ্যে ২৯ জন, কাঁচড়াপাড়ার ২৪ জনের মধ্যে ১৭ জন, হালিশহরের ২৩ জনের মধ্যে ১৭ জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
ছবি সংগৃহীত
Facebook Comments