লোকসভার ভোট চলাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করেছিল প্রখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ‘টাইম’। সেই টাইমই এখন মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ভোটযুদ্ধের মাঝে হঠাৎই যেন বিস্ফোরণ ঘটায় ম্যাগাজিনের একটি প্রবন্ধ। অস্বস্তি বাড়ে মোদি তথা বিজেপি শিবিরে। টাইমের কভার স্টোরিতে মোদিকে ‘ডিভাইডার ইন চিফ’ বা ‘ভারতের বিভাজনের গুরু’ আখ্যা দেয়া হয়।
যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় দেশের রাজনীতিতে। সেই বিতর্ক কোনোভাবে সামাল দিয়েছেন মোদি। বড় ম্যান্ডেট নিয়ে ফিরে এসেছেন ক্ষমতায়।
আজই দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এর দুদিন আগেই ভোল পাল্টে ফেলল টাইম। যে ম্যাগাজিন মোদিকে ‘প্রধান বিভাজক’র খেতাব দিয়েছিল, সেই ম্যাগাজিনই এবার তাকে ‘ঐক্যের কাণ্ডারি’ বলে ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
মঙ্গলবার প্রবন্ধটি প্রকাশ করে টাইম। আগেরবার ম্যাগাজিনে মোদির নিন্দাসূচক যে প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছিল, সেটি ছিল কভার স্টোরি। অর্থাৎ সেটি ছিল ম্যাগাজিনের নিজস্ব মতামত।
কিন্তু এবার প্রশংসাসূচক যে প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে, সেটি নিতান্তই লেখকের মতামত। মতামত বিভাগেই তা ছাপা হয়েছে। আর প্রবন্ধটির লেখক মনোজ লড়োয়া মোদির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১৪ নির্বাচনে মোদির প্রচার কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন।
লোকসভার ভোটের সময় মোদি সম্পর্কে যে কড়া ভাষায় লেখা হয়েছিল, এবার ঠিক তার উল্টো মনোগ্রাহী ভাষায় মোদির প্রশংসা করা হয়েছে।
প্রবন্ধে লেখক বলছেন, মোদি যেভাবে পুরো দেশকে একত্রিত করতে পেরেছেন, তা গত কয়েক দশকে কোনো প্রধানমন্ত্রী পারেননি। আর নির্বাচনী ময়দানে মোদির সাফল্যের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তার ‘ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষমতাকে।
বলা হয়েছে, মোদি এমনভাবে ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন যা স্বাধীনতার পর ৭২ বছরের বেশিরভাগ সময় নেহরু-গান্ধী পরিবারের লোক ক্ষমতায় থেকেও করতে পারেননি।
প্রবন্ধটিতে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে ভারতের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলোর মধ্য থেকে উঠে এসেছেন। তাই গরিব মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পারেন। তার আমলে ভারতের যাবতীয় জাতপাতের ভেদাভেদ ঘুচে গেছে। সংকীর্ণতা কেটে গেছে।
শুধু তাই নয়, মোদির বিরুদ্ধে যে সমালোচনা রয়েছে, তা অযাচিত ও অনুচিত বলেও মনে করছেন লেখক। প্রবন্ধে ২০১৪-১৯ সালের মধ্যে মোদির নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে।
অথচ আগের লেখাতেই মোদিকে নিয়ে প্রচ্ছদে লেখা হয়েছিল, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির ফাঁদে পড়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় ভারতীয় ইতিহাসে সব থেকে বেশি অপমানজনক, ব্যক্তিগত আক্রমণ আর নিম্ন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী সমাজের প্রতিটি বিভাগ সম্পর্কে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারে মোদিকে অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। মোদির আগে ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। সেই সময় উনি গোটা দেশের ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
ছবি সংগৃহীত
Facebook Comments