লোকসভায় বাজেট পেশ করছেন নব-নির্বাচিত নারী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পরিকাঠামো থেকে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর। গ্রামীণ উন্নয়নে ব্যাপক জোর দেয়া হয়েছে ভারতের বাজেটে। গ্রামীণ জীবনধারার মানোন্নয়নে একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা এবং চালু প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রস্তাব।
এক নজরে ভারতের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট :
১ লক্ষ কোটির অর্থনীতিতে পৌঁছতেই ভারতের ৫০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। এখন চাঁদে পৌঁছানোর দিকে এগোচ্ছে ভারত। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির লক্ষ্য রেখে এগোচ্ছে ভারত। এখন এই অর্থনীতি ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের (তিন লক্ষ কোটি) অর্থনীতি যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। যা সারা বিশ্বে তৃতীয়। বিজেপি যখন ২০১৪ সালে সরকার গঠন করেছিলাম, তখন ছিল ১.৮৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি ছিল।
ন্যূনতম সরকার, সর্বোত্তম পরিষেবা, এটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সুবিধা সব ক্ষেত্রে পৌঁছে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ তিন গুণ বৃ্দ্ধি পেয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে প্রথম সরকার ব্যাপক সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে। ভোটে স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন দেশবাসী। সম্প্রতি শেষ হওয়া লোকসভা ভোটে ব্যাপক হারে মানুষ ভোট দিয়েছেন।
আগামী ৫ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে দেশটির সরকার। জোর দেয়া হবে অনলাইন হোম লোন, ডোর টু ডোর পরিষেবায়। দেশটির সরকারি ব্যাংকগুলিকে ৭০ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে। নন পারফর্মিং সম্পদ কমেছে ১ লক্ষ কোটি, তাদের জন্য পেটেন্ট এবং জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন দেয়ার সিদ্ধান্ত।
২০১৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে রেলের জন্য ৫০ লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া হবে।
সৃজনশীল শিল্পী ও কারিগরদের জন্য বিশেষ প্রকল্প আনবে মোদী সরকার। সাম্প্রতিক ভোটে নারীদের ভোটদানের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে যা দেশটির নারীদের এই কাজের মূল্যায়ন উন্নয়নে সাহায্য করবে। দেশটির সরকার নারীদের ভুমিকা ও সুবিধা দিতে বদ্ধপরিকর বলে জানায়। গ্রামীণ অর্থব্যবস্থায় নারীদের ভুমিকা অপরিসীম, এই মন্ত্রেই বিশ্বাসী ভারত সরকার। ‘নারীদের উন্নতি ছাড়া বিশ্বের উন্নয়ন সম্ভব নয়’, স্বামী বিবেকানন্দের এই কথা জানান অর্থমন্ত্রী। ‘নারী থেকে নারায়ণী’ নারী ক্ষেত্রে এই স্লোগান তার।
৭ কোটি নতুন গ্যাস কানেকশন দেয়া হয়েছে উজ্জ্বলা যোজনায়। গ্রাম-গরিব-কৃষক, আমাদের সরকারের প্রতিটি প্রকল্পে এই লক্ষ্যই থাকে আমাদের সরকারের বলে জানান অর্থমন্ত্রী। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, গ্রামেই ভারতের আত্মা বাস করে। দেশের গ্রামীন অংশের উন্নয়নে জোর দিয়েছে সরকার।
৬০ বছর বয়সের পর অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য মাসে ৩,০০০ টাকা পেনশনের ব্যবস্থা করেছে ভারত সরকার। এই সরকার ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’-এ বিশ্বাসী বলে জানায়।
তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য স্টার্ট-আপে বিশেষ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা। ব্যবসায় উৎসাহ দিতে ব্যাংকগুলি যথাসাধ্য আর্থিক সাহায্য করবে। এতে নতুন ব্যবসায়ীদের উৎসাহ বাড়বে, নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে, নিজেদের ব্যবসা বাড়াতেও সহায়ক হবে। শুধুমাত্র স্টার্ট-আপ ব্যবসার জন্য মোদী সরকার দূরদর্শনে টেলিভিশন প্রোগ্রাম শুরু করতে চায় বলে জানান।
ন্যাশনাল স্পোর্টস এডুকেশন বোর্ড তৈরি করার ঘোষণা, সমস্ত রকম খেলাধুলোয় উৎসাহ দিতে ও আর্থিক সাহায্য দিতে বোর্ড কাজ করবে। উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের বিরাট সুযোগ রয়েছে, বিদেশি ছাত্রদের দেশে টানতে উৎসাহ বাড়ানো হবে। বিভিন্ন গবেষণায় অনুদান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সমন্বয় আনতে এই এনআরএফ তৈরির প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে।
ভারতের এই সরকার মনে করে দ্রুত শহরায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি গ্রামে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প তৈরির লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে ১২,৫০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে ৮০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলে জানায়। নতুন ৩০০ কিলোমিটার মেট্রো লাইন তৈরির লক্ষ্যে এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত।
ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন তৈরির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বাজেট ঘোষণায়। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মেট্রো রেলের পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। মহাত্মা গান্ধীর জীবনী, আদর্শ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘গান্ধীপিডিয়া’।
ব্যবসা সরলীকরণের সুবিধা কৃষকদেরও পাওয়া উচিত। ডাল উৎপাদনে কৃষকরা বিপ্লব নিয়ে এসেছেন, তৈলবীজ ক্ষেত্রেও তারা এই সাফল্য পাবেন বলে আমরা আশাবাদী। দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে উৎসাহ দেওয়া হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। কৃষি পরিকাঠামোয় ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
প্রথমে ৩১৪ দিনে এই বাড়িগুলি তৈরি সম্পূর্ণ করা হত, এখন সেটা কমে দাড়িয়ে ১১৪ দিন হয়েছে। আরও ১ দশমিক ৯৫ কোটি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হবে। দেড় কোটি গ্রামীণ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে গত পাঁচ বছরে। কেউ না নিতে চাইলে সেটা আলাদা বিষয়। প্রতিটি গ্রামে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ ও দূষণহীন জ্বালানি পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা।
রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে কাজ করা হবে। বিদেশি শিল্পপতি, বিনিয়োগকারীদের নিয়ে প্রতি বছর একটি বাণিজ্য সম্মেলণ করা হবে। ভারত বিদেশি বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য করে তুলতে বদ্ধ পরিকর মোদী সরকার।
আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা সত্ত্বেও ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। কেওয়াইসি পদ্ধতিকে আরও সহজ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কর্মযোগী প্রকল্পের ঘোষণা। ‘ভারতমালা’ ‘সাগরমালা’ প্রকল্পের মাধ্যমে শহর-গ্রামের ব্যবধান কমানোর পরিকল্পনা।
বেসামরিক বিমান পরিবহণে ভারতে বিপুল বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে। সরকারি যানবাহনে যাতায়াতের জন্য একটি নির্দিষ্ট কার্ড তৈরি হবে। এতে ৩ কোটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। এই ঋণের জন্য মাত্র ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে এই সেব সংস্থাকে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সরকার ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সাধ্যের মধ্যে বাড়ি তৈরিতে জোর দেওয়া হবে। আধুনিক বাড়িভাড়া আইন আনা হবে।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments