জাপানে কিয়োটো শহরে একটি অ্যানিমেশন প্রডাকশন কম্পানির স্টুডিওতে সন্দেহভাজন অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২৯ জন। পুলিশ জানিয়েছে, এক ব্যক্তিকে আগুন লাগাতে এবং ‘মর মর’ বলে চিত্কার করতে দেখা গেছে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আটক ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে ‘কিয়োটো অ্যানিমেশন’ নামের ওই কম্পানির স্টুডিওতে ঢুকে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন দেয় এক ব্যক্তি। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন তিনতলা ভবনটির অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এএফপিকে জানান, বেশির ভাগই ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। অন্তত ১১ জনকে পাওয়া গেছে, যাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, অগ্নিদগ্ধ ৩৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আগুন লাগার সময় ভবনটিতে অন্তত ৭০ জন অবস্থান করছিল বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
টিভি ফুটেজে দেখা যায়, আগুন লাগার পর তিনতলা ভবনটির জানালা দিয়ে ঘন সাদা ধোঁয়া বের হচ্ছে। ভবনটির প্রধান ফটকের সামনে আগুন ধরে যাওয়ায় মানুষ আটকে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের সময় তারা প্রথম কিয়োটা এনিমেশনে আগুন লাগার সংবাদ পায়। খবর প্রদানকারী ব্যক্তি জানাচ্ছিল, ভবনটির নিচতলায় বড় বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং ঘন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
কিয়োটো পুলিশ বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, এক ব্যক্তি হঠাৎ স্টুডিওতে ঢুকে পড়ে এবং তরল পদার্থ ছুড়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে কয়েকটি ছুরিও পাওয়া গেছে। তবে ওই ব্যক্তির সঙ্গে স্টুডিওটিওর কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানা যায়নি। তবে সে কম্পানিটির সাবেক কর্মী ছিল না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি স্টুডিও ভবনটিতে গ্যাসোলিনজাতীয় পদার্থ ছুড়েছে বলে জানা গেছে। তাকে ভবনটির চারদিকে তরল ছিটাতে দেখা গেছে। তবে আগুন লাগানোর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জাপানি গণমাধ্যম এনএইচকেকে বলেছে, তারা টানা কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে। তারপর কম্বলে পেঁচিয়ে লোকজনকে বের করে আনা হচ্ছে, এমনটি দেখেছে। তবে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্টুডিও কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্টুডিওটি এনিমেশন ফিল্ম ও গ্রাফিক উপন্যাস তৈরি করে। কম্পানিটি ভক্তদের কাছে এর মানসম্পন্ন কাজের জন্য বিখ্যাত। কম্পানিটির দুটি আলোচিত এনিমেশন সিরিজ হচ্ছে ‘দ্য মেলাংকোলি অব হারুহি সুজুমিয়া’ ও ‘কে-অন’। এ ছাড়া আরো জনপ্রিয় এনিমেশন সিরিজ ও ফিল্ম তৈরি করেছে কম্পানিটি। এ বিষয়ে কম্পানির উজি সিটির সদর দপ্তরে ফোন করা হলে এক নারী বলেন, ‘কী ঘটছে আমরা তা জানার প্রক্রিয়ায় আছি।’ প্রসঙ্গত, অপরাধের হার কম থাকার জন্য জাপান বিখ্যাত। বিশেষ করে দেশটিতে সহিংস অপরাধ খুবই দুর্লভ ঘটনা। জাপানে অগ্নিসংযোগকে বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ১৬ জনকে হত্যার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments