মঙ্গলের রুক্ষ লাল জমিতে নাসার রোভার ‘কিউরিসিটি’, আর সেখানেই খোঁজ মিলল সুবিশাল এক হ্রদের কঙ্কালসার দেহ। প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি বছর আগে যা ছিল জলে পরিপূর্ণ। এই হ্রদটি প্রায় ১০০ মাইল বা ১৫০ কিলোমিটার চওড়া। নাসার এই রোভারের কৌতূহলী চোখে আরও দেখতে পায় এই শুকিয়ে যাওয়া হ্রদের খাত আর গা বেড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আলো ঝলসানো লবণের পাহাড়। না, খাবার লবণ নয়, সুবিশাল সেই হ্রদের খাতজুড়ে রয়েছে খনিজ লবণের স্তূপ। যাকে ‘মিনারেল সল্ট’ বলা হয়। উচ্চতায় যা প্রায় ৫০০ ফুট। নাসা সেই এলাকার নাম দিয়েছে ‘সাটন আইল্যান্ড’। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই লবণের পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে এখনো লুকিয়ে রয়েছে প্রচুর জল। মঙ্গলের ‘গেইল ক্রেটার’ এলাকায় এসব নমুনার খোঁজ পেয়েছে নাসার রোভার। নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলে জলে ভরা হ্রদটি ছিল অবিকল দক্ষিণ আমেরিকার আল্টিপ্ল্যানোতে লবণাক্ত কুইসকুইরো হ্রদের মতোই! আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-সাময়িকী ‘নেচার-জিওসায়েন্সে’ নাসার বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়। নাসার ‘কিউরিসিটি মিশন’-এর প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট অশ্বিন ভাসাভাড়া বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে মঙ্গলে থাকা সুপ্রাচীন হ্রদটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বারবার শুকিয়ে গেছে, তারপর আবার ভরে উঠেছে টলটলে জলে।
গেইল ক্রেটার নামক যে এলাকায় এই প্রাচীন হ্রদের কঙ্কালসার দেহের হদিস মিলেছে, আমাদের বিশ্বাস, তার আশপাশের এলাকা ছিল অত্যন্ত রুক্ষ। অনেকটা সাহারা মরুভূমির ন্যায়। মরুভূমিতে যেমন মরূদ্যান থাকে, হ্রদটি তেমনই ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আরও প্রমাণ পেয়েছি যে, হ্রদটি শুধুই লবণে নয়, তরল জলেও পরিপূর্ণ ছিল। আর তাই, হ্রদটির শুকিয়ে যাওয়ার সময়েই সেই লবণের পাহাড় তৈরি হয়েছিল। পাহাড়ি গেইল ক্রেটার এলাকা থেকে নেমে আসার পর মূলত মরুভূমির মতো এলাকাতেই ছিল সেই সুবিশাল হ্রদ।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে মঙ্গলের বুকে গ্রহাণু, উল্কাপিণ্ড আর ধূমকেতুরা আছড়ে পড়ার ফলেই তৈরি হয়েছিল সেই গেইল ক্রেটার এলাকা। মূলত এই অঞ্চলটি ছিল সুবিশাল গহ্বর। এরপর পানির স্রোত এসে তা ভরিয়ে দেয়। এরপর বাতাসের ধাক্কায় সেখানে জন্ম হয় সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ যার নাম মাউন্ট শার্প। এটি অনেকটা আমাদের মাউন্ট এভারেস্টের মতো।
Facebook Comments