চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের বন্দিশিবিরে উইগুর মুসলমানদের নির্যাতন ও নিপীড়নের চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য ফাঁস হওয়ার পরও এক্ষেত্রে পিছু হটছে না চীন। বেইজিংয়ের দাবি, এটি চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বুধবার (২৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়। খবরে বলা হয়, গত রোববার ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে উইগুরে লাখ লাখ মুসলমানকে নির্যাতন ও নিপীড়নের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। বহুদিন ধরে চীন সরকার দাবি করে এসেছে বন্দিশিবিরগুলো স্বেচ্ছামূলক কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে মানুষকে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া, তাদের যখন ইচ্ছে তারা সেখান থেকে চলে যেতে পারেন।
কিন্তু ফাঁস হওয়া কয়েকশ’ পৃষ্ঠার নথিতে চীন সরকারের এসব দাবি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) তাদের ওয়েবসাইটে নথিগুলো প্রকাশ করেছে। সেসব নথির তথ্য আনুযায়ী, লাখ লাখ উইগুর ও অন্য সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে জোর করে ‘সুনাগরিক’ তৈরি ও মান্দারিন ভাষা শেখানোর চেষ্টা চলছে। আচরণগতভাবে সম্পূর্ণ রূপান্তরের আগ পর্যন্ত তাদের সেখানেই থাকতে হবে।
কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত এসব বন্দিশিবিরে বন্দিদের প্রতিটি বিষয় কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। ডরমিটরি ও শ্রেণিকক্ষগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে।
আইসিআইজে চীন সরকারের এই নথিগুলোকে ‘দ্য চায়না কেবল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এর মধ্যে নয় পৃষ্ঠার একটি নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৭ সালে জিনজিয়াংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির সহকারী সম্পাদক ঝু হাইলুন ও বন্দিশিবির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা নির্দেশনাটি চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে বন্দিশিবিরগুলোকে উচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কারাগার হিসেবে পরিচালনা করা উচিত বলে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া, কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রাখা, নিয়ম ভঙ্গে শাস্তি দেওয়া এবং কেউ যেন পালাতে না পারে, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তাদের আচরণগত পরিবর্তনে মান্দারিন ভাষা শিক্ষাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া ও তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার বিষয়টিও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সেখানে।
নথিগুলো বিশ্বাসযোগ্য কি-না এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো সরাসরি কিছু বলেনি। গত সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, আমি আবারও বলছি, জিনজিয়াংয়ের বিষয়টি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নির্দিষ্ট কিছু সংবাদমাধ্যম চীনের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ও মৌলবাদ দমনের চেষ্টাকে হেয় করছে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, আনুমানিক ২০ লাখ উইগুর ও অন্য সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী বন্দি অবস্থায় জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরগুলোতে রয়েছেন। এ কারণে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে, চীনা কর্মকর্তাদের ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন সরকার।
গত ২৩ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে ২৩টি দেশ, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো জিনজিয়াংয়ের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয়। কিন্তু, বেলারুশ একটি বিবৃতিতে দাবি করে ৫৪টি দেশ জিনজিয়াংয়ের বিষয়টিতে সমর্থন দিয়েছে, যেখানে সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ইরানসহ একাধিক ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দেশও রয়েছে।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments