উত্তরপ্রদেশের উন্নাও-কাণ্ডে আবারও অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বিজেপির যোগী সরকারকে। গণধর্ষণ-মামলার সঙ্গে জড়িত চারটি মামলা লক্ষ্ণৌ থেকে সরানো হচ্ছে দিল্লিতে। অন্য দিকে, দুর্ঘটনার তদন্ত সাত দিনের মধ্যে শেষ করার জন্য বৃহস্পতিবারই (১ আগস্ট) সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালের জুন মাসে এক আত্মীয়র সঙ্গে অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে চাকরির জন্য গেলে তাকে ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত বিধায়ক। বৃহস্পতিবার সিবিআই অফিসারদের তলব করে ভারতের শীর্ষ আদালত। নাবালিকাকে গণধর্ষণ করায় অভিযুক্ত বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারকে নিয়ে চাপ বাড়তে দেখে, অভিযোগের প্রায় দু’বছর পর তাকে বহিষ্কারের ঘোষণা করেছে বিজেপি। এছাড়াও, সুপ্রিম কোর্ট মেয়েটিকে শুক্রবারের মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে। পাশাপাশি মেয়েটি ও তার আইনজীবীকে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনী বা সিআরপিএফের সুরক্ষা দেয়ার নির্দেশ দেয়।
উন্নাও মামলার গতিপ্রকৃতি জানতে বৃহস্পতিবার, সিবিআইয়ের ‘দায়িত্বরত’ কর্মকর্তাদের সুপ্রিম কোর্টে ডেকে পাঠায় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। তখন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বিষয়টি শুক্রবার (২ আগস্ট) খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। যে সব সিবিআই কর্মকর্তা উন্নাও-কাণ্ডের তদন্ত করছেন তারা দিল্লির বাইরে বলে যুক্তি তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু, সেই অনুরোধ খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘সিবিআই প্রধান ফোনেই ওই মামলার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন এবং আজই তা আদালতকে জানাবেন।’
২০১৭ সালে গণধর্ষণ কাণ্ডের পর থেকে ঘটনার গতিপ্রকৃতি বার বার নানা খাতে মোড় নিয়েছে। নির্যাতিতার দুর্ঘটনার পর, তোলপাড় শুরু হয় ভারতজুড়ে। ক্রমশ বাড়ছে জনমতের চাপ। আর তাতে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারও। তা আঁচ করেই, এ দিন চার বারের বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। এর আগে কুলদীপকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু, কবে সেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল তা প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
গত ২৮ জুলাই রায়বরেলীতে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ওই নির্যাতিতা। দুর্ঘটনায় তার দুই আত্মীয়ের মৃত্যুও হয়। এই মুহূর্তে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নির্যাতিতা। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তার আইনজীবীও। অথচ, প্রাণের আশঙ্কা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আগেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতার স্বজনরা।
ওই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকেও। তাতে অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্ত বিধায়কের অনুগামীরা নিয়মিত তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মামলাটি উত্তরপ্রদেশের বাইরে স্থানান্তর করা হোক। সেই চিঠি কেন প্রধান বিচারপতির হাতে পৌঁছয়নি তা সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments