🇧🇩 ধোলাইখাল গাবতলী মাতুয়াইলে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ২০, গ্রেপ্তার ৯০

বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানসহ ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ৯০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, আজ ঢাকার প্রবেশ মুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের কোনো অনুমতি নেননি। এমনকি তারা অনুমতি নেয়ার জন্য কোনো আবেদনও করেননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে বিএনপি এবং মিডিয়াকে জানানো হয়, তাদের (বিএনপি) আজকের অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি দেয়া হয়নি। যেহেতু ডিএমপির পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি, সেহেতু এটি একটি বে-আইনি সমাবেশ।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে গাড়িতে আগুন দেয়াসহ গতিরোধ, ককটেল নিক্ষেপ ও পুলিশের ওপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ চালান। এ আক্রমণে ডিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণের যুগ্ম-কমিশনার মেহেদীসহ প্রায় ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের ওপর আক্রমণ ঠেকাতে ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ থেকে নিবারণের জন্য তাদের ওপর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। তারা পুলিশের ৮ থেকে ১০টি গাড়ি ভাংচুর করাসহ প্রায় ২০টির মতো গণপরিবহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। এর প্রেক্ষিতে তাদের ওপর বল প্রয়োগ করা হয়। এখন পর্যন্ত অভিযানে বিএনপির ৯০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। যারা এসব কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়মিত মামলা হবে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজধানীর প্রবেশপথ গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, ধোলাইখাল, উত্তরা ও মাতুয়াইলে লাঠিসোঁটা হাতে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। তাই জনদুর্ভোগ লাঘব করতে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশের যানবাহনে হামলা চালায়। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। অনেক জায়গায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সংঘাতের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে ডিএমপি’র কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর মাতুয়াইলে শনিবার সকালে বিএনপির সমর্থকেরা পুলিশের আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ওই হামলায় ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান ও দুইজন এএসআই আহত হন। বংশাল, সূত্রাপুর ও ধোলাইখাল এলাকায় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেল এবং লাঠিপেটায় আহত হন ডিবি লালবাগের লালবাগ জোনাল টিম লিডার মোস্তফা কামাল, এসআই মো. ইসমাইল হোসেন, এএসআই দেলোয়ার হোসেন এবং কনস্টেবল সৈয়দ জিন্নাত আলী। তাদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ধোলাইখালে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। প্রথমে পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পিছিয়ে যান। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে ধাওয়া দেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইশরাক হোসেন আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে গয়েশ্বরকে ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয় ডিবি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নির্দেশে বিএনপির লোকজন ধোলাইখালে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) উত্তরের যুগ্ম কমিশনার (সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম) খন্দকার নুরুন্নবী।

তিনি বলেন, বিএনপি বাবুবাজার ব্রিজের নিচে অবস্থান করে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তারা ডিএমপির কাছ থেকে অনুমতি পাননি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য আমরা সকাল থেকেই অবস্থানে ছিলাম। যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন এবং যান চলাচল যেন বিঘ্ন না হয়। পরে বিএনপি রাস্তা ব্লক করে। এসময় যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলতে পারছিল না। আমরা প্রথমে তাদের ওয়ার্নিং দেই রাস্তা ছাড়ার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ হামলায় আমাদের ১০-১৫ জন অফিসার ও ফোর্স আহত হয়। পরে আমরা তাদের রাস্তা থেকে তাদের সরাতে সক্ষম হই। সেখান থেকে আমরা ১২ জনকে আটক করি। তিনি (গয়েশ্বর) এ সমাবেশে লিড দিচ্ছিলেন। তার নির্দেশেই বিএনপির লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে তাকে আমরা হেফাজতে নিয়েছিলাম।

ডিএমপি’র কর্মকর্তারা আরও জানান, সকালের দিকে গাবতলীতে খালেক এন্টারপ্রাইজের বাস কাউন্টারের পাশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হন। তারা বে-আইনিভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সেখান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান অসুস্থ হয়ে সড়কে পড়ে যান। পরে তাকে ভ্যানে করে নিয়ে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে শুক্রবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ থেকে রাজধানীর প্রবেশ দ্বারে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চারটি প্রবেশপথ- উত্তরা, গাবতলী, নয়াবাজার এবং যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকায় এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় দলটি। তবে গতকাল রাত ১১টার পর ডিএমপি থেকে জানানো হয়, বিএনপি এই কর্মসূচি পালনের জন্য আবেদন করেনি। পুলিশও এই কর্মসূচিতে অনুমতি দেয়নি।

আইনশৃঙ্খলা অবনতির গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনদুর্ভোগের বিষয় বিবেচনায় এই কর্মসূচি পালনে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়া হয়নি।

সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল
ছবিঃ সংগৃহিত