কোপার কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে শুক্রবার এস্তাদিয়ো অলিম্পিকো পেদ্রো লুদোভিকোয় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতেছে পেরু। শেষ আটে বি-গ্রুপের দ্বিতীয় দল পেরু আর এ-গ্রুপের তৃতীয় দল প্যারাগুয়ের মধ্যকার খেলাটি নির্ধারিত ৯০ মিনিটও ৩-৩ গোলে সমতা থাকায় ম্যাচের ফলাফল পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। আর সেখানে পেরুর সান্তিয়াগোর শট ঠেকিয়ে দেন প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক। এরপর প্যারাগুয়ের সামুদিও বল বাইরে মারেন। পেরুর কুয়েভার শট আবার প্রতিহত করেন প্যারাগুয়ে গোলরক্ষক। জবাবে এসপিনোরাল শট প্রতিহত করেন পেরু গোলরক্ষক। আর ট্রাউকো শেষ শটে লক্ষ্যভেদ করার পর জয় ছিনিয়ে নেয় পেরুভিয়ানরা।
এর আগে খেলার একাদশ মিনিটেই গোল পেতে পারতো প্যারাগুয়ে। কিন্তু মার্তিনেসের হেডার প্রতিহত করেন পেরুর গোলরক্ষক। এর কিছুক্ষণ পরেই গুস্তাভো গোমেজের দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় তারা। ১৭তম মাথায় গঞ্জালেসের শট পেরুর গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলে ব্যবধান বাড়েনি। ২১তম মিনিটে কারিল্লোর পাস থেকে গোল করে পেরুর লাপাদুলা সমতা ফেরান। প্রথমার্ধের ৪০তম মিনিটে লুপাদুলার দ্বিতীয় গোলে ফের ব্যবধান বাড়ায় পেরু। এরপর যোগ করা সময়ে দশ জনের দলে পরিণত হয় প্যারাগুয়ে। ম্যাচে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখেন প্যারাগুয়ের গোমেজ। ফলে রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়ার ইশারা করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে চাপ বাড়ায় প্যারাগুয়ে। ৪৭তম মিনিটে প্যারাগুয়ের মার্টিনেজেরে শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫২তম মিনিটে প্যারাগুয়ের সানচেজের শট প্রতিহত করেন পেরু গোলরক্ষক। দুই মিনিট পরেই আলোনসোর গোলে সমতায় ফেরে প্যারাগুয়ে। এরপর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল দুই দলই। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল আসেনি। ৬৫ মিনিটে পেরুর মিগুয়েল ট্রাউকোর ডান পায়ের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পাঁচ মিনিট পরেই বক্সের বাইরে থেকে কুয়েভার জোরালো শট জাল খুঁজে পায়নি। পেরু আরও কয়েকটি সুযোগ হারায় ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায়। ৭০ মিনিটে পেরুর সান্তিয়াগোর বাঁ-পায়ের শট প্রতিহত করেন প্যারাগুয়ে গোলরক্ষক। কিছুক্ষণ পর কারিল্লোর শট মাঠের বাইরে চলে যায়। এরপর আরও একবার তাদের দুজনের প্রচেষ্টাই বিফলে যায়। কিন্তু ৮০তম মিনিটে কারিল্লোর পাস থেকে গোল করেন য়োশিমার ইয়োতুন। ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় পেরু। শেষদিকে দশ জনের দলে পরিণত হয় পেরুও। এর ফল শেষে গিয়ে ভুগতে হয় তাদের। খেলার নির্ধারিত সময়ের একদম অন্তিম মুহূর্তে গোল হজম করে তারা। বদলি হিসেবে মাঠে নামা গ্যাব্রিয়েল ৯০ মিনিটে গোল করে প্যারাগুয়েকে সমতায় ফেরান। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে (নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোপার কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা বাতিল করা হয়েছে)। যেখানে জয় পায় পেরু।
অন্যদিকে রিও দে জেনেইরোর নিল্তন সান্তোস স্টেডিয়ামে শনিবার ভোরে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলটি করেন লুকাস পাকুয়েতা। এর দুই মিনিট পরেই স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল। আগেই শেষ আট নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্রামে ছিলেন নেইমার-কাসেমিরোরা। চিলির বিপক্ষে আট পরিবর্তন এনে তাদের দুজনকেই ফেরান ব্রাজিল কোচ। অন্যদিকে চিলি নামে দলে তিনটি পরিবর্তন এনে। দলে ফেরেন এরিক পুলগার ও সেবাস্তিয়ান ভেগাস। চোট কাটিয়ে ফেরেন আলেক্সিস সানচেস। শেষ আটে বি-গ্রুপের এক নম্বর দল ব্রাজিলকে শুরু থেকেই চাপে রাখার চেষ্টা করে এ-গ্রুপের চার নম্বর দল চিলি। ম্যাচের দশম মিনিটে প্রথমবার যথাযথ আক্রমণে ওঠে তারা। যদিও ভার্গাসের শট প্রতিহত করেন এদারসন। ৫ মিনিট পর লেফট উইং থেকে ব্রাজিলের রিচার্লিসনের দূরপাল্লার শটে বল সরাসরি চলে যায় ব্র্যাভোর গ্লাভসে। ২৭তম মিনিটে ভার্গাসের শট প্রতিহত করেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক।
ব্রাজিল প্রথম বড় সুযোগ পায় ৩২তম মিনিটে। চিলির রক্ষণের ভুলে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যান দানিলো। বক্সের সামনে থেকে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বল ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। ৪৩তম মিনিটে জেসুসের শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান চিলির গোলরক্ষক। বাকি সময়ে দুই দলই গোলমুখ খুলতে ব্যর্থ হলে বিরতিতে ম্যাচ গোলশূন্য থাকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন ফিরমিনোর বদলি হিসেবে নামা পাকুয়েতা। নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণকে পরাস্ত করেন তিনি। এর দুই মিনিট পর হাই ফুটের জন্য সরাসরি লাল কার্ড দেখেন জেসুস। অনেক উপরে পা তুলে বলের নিয়ন্ত্রক নিতে গেলে তার বুট গিয়ে লাগে ইউজেনিও মেনার মুখে। বিপজ্জনক ফাউলের জন্য তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি।
১০ জনের ব্রাজিলকে চাপে ফেলতে আগ্রাসী ফুটবল খেলার চেষ্টা চালায় চিলি। কিছুক্ষণ পর চিলির হয়ে ফ্রি-কিক জেতেন আরাংগুইজ। ফ্রি-কিক থেকে ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দিলেও অফসাইডের জন্য তা বাতিল করেন রেফারি। পুরো ম্যাচে অনেকটা নিষ্প্রভ থাকা নেইমার দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি ক্ষিপ্রগতিতে চিলির রক্ষণে ঢুকে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তার শট প্রতিহত করেন ব্র্যাভো। এরপর চিলির শট বারে লেগে ফিরে আসে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিলির আক্রমণের ধার আরও বাড়তে থাকে। তবে বল দখলের লড়াইয়ে চিলি অনেকটা এগিয়ে থাকলেও ব্রাজিলের জমাট রক্ষণ তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। বরং ম্যাচের শেষদিকে বড় সুযোগ নষ্ট হয় ব্রাজিলের। নেইমারের পাস কন্ট্রোল করতে ব্যর্থ হন পাকুয়েতা। রাতের আরেক কোয়ার্টারে প্যারাগুয়েকে টাইব্রেকারে হারানো পেরুর বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে ব্রাজিল।
Facebook Comments