বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলকে গরুপাচার মামলায় সমন পাঠাতে পারবে সিবিআই। রক্ষাকবচ তুলে নিল কলকাতা হাইকোর্ট। বীরভূমে গরুপাচার কাণ্ডে এর আগে চারবার অনুব্রত মন্ডলকে সমন পাঠিয়েছে সিবিআই। সিবিআই জানিয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনুব্রত মন্ডলের আইনজীবী আদালতের কাছে রক্ষাকবচ চেয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, সিবিআই যদি জানায়, অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হবে না, তাহলেই তিনি অফিসারদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির একক বেঞ্চ সেই রক্ষাকবচ নাকচ করে দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, যে কোনো মামলায় তদন্তকারী সংস্থার হাত-পা বেঁধে দিতে রাজি নয় আদালত। তদন্তকারী সংস্থার স্বাধীনভাবে তদন্ত করার অধিকার আছে।
ফলে অনুব্রত মন্ডল যে রক্ষাকবচ চাইছেন, তা দেওয়া হবে না। তাকে সিবিআই ডাকলে হাজিরা দিতে হবে। ফলে এবার সিবিআই অনুব্রতকে ডাকলে তাকে হাজির হতেই হবে। এর আগে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চও একই রায় দিয়েছিল। গরুপাচার মামলায় অনুব্রতকে সিবিআই ডাকার পর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হননি। তারই মধ্যে রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতের কাছে গেছিলেন অনুব্রতের আইনজীবী। শেষপর্যন্ত সেই রক্ষাকবচ তিনি পেলেন না। বীরভূমের অনুব্রত মন্ডল বরাবরই বিতর্কে জড়িয়ে থাকেন। ক্যামেরার সামনে পুলিশকে হুমকি দিয়েছেন তিনি। প্রকাশ্য জনসভায় পুলিশের উপর বোমা মারার কথা বলেছেন, বিরোধীদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। সম্প্রতি রামপুরহাট-কাণ্ডেও তার নাম উঠে এসেছে।
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই জানিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে বালি, পাথর এবং গরু পাচারের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তাদের অনুমান। আপাতত সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই তারা তদন্ত চালাচ্ছে। সিবিআইয়ের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এলাকার স্থানীয় নেতাদের রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের ভাবাচ্ছে। পাচারের কাঁচা টাকা জেলার বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতো বলে তাদের সন্দেহ।
বস্তুত, এর আগে বীরভূমে গরু পাচারের তদন্তে নেমে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলকে চারবার সমন পাঠিয়েছিল সিবিআই। এবার রামপুরহাট-কাণ্ডেও সরাসরি তার নাম জড়িয়ে যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। রামপুরহাট-কাণ্ডে নিহত এক ব্যক্তির পরিবারও অভিযোগ করেছে, এই ঘটনার সঙ্গে গরু এবং বালি পাচারের যোগ আছে। এবং অনুব্রত মন্ডল সরাসরি তার সঙ্গে জড়িত।
অনুব্রত অবশ্য জবাবে বলেছেন, তাঁকে ফাঁসানোর জন্যই এসব কথা বলা হচ্ছে। বগটুইয়ের ঘটনা ঘটার পর অনুব্রত বলেছিলেন, সেখানে টিভি ফেটে আগুন লেগেছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুইয়ে যান। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে ছিলেন অনুব্রত। এদিন আদালত তার উপর থেকে রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ায় মামলাটি নতুন দিশা পেতে পারে বলে মনে করছেন সিবিআইয়ের অফিসাররা।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)
Facebook Comments