ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র জন্য ভারতের উপকূলবর্তী রাজ্যগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কার্যত ঝড়ের আতঙ্কে কাঁপছে ভারতের তিন রাজ্যের উপকূল সংলগ্ন মানুষরা। তীব্র ঝড় ও ভারী বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। ইতোমধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশগামী ১০৩টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তা গণেশ কুমার দাস জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) গভীর রাতেই মাঝ সমুদ্রে শক্তি বাড়িয়ে প্রবল আকার ধারণ করেছে ‘ফণী’। রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার দীঘা সমুদ্র থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থান করছে। ‘ফণী’র দাপটে শুক্রবার (৩ মে) থেকেই কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে ১২০ থেকে ১৩৬ কিলোমিটার বেগে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হতে পারে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল থেকেই কলকাতার আকাশের দখল নিয়েছে মেঘের সারি। বুধবার (১ মে) পর্যন্ত যে চড়া রোদ দেখা গিয়েছিল, সেই রোদ আকাশ থেকে উধাও। মেঘলা আকাশের ফলে গুমোট ভাব বেড়েছে। কলকাতার বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ৭০ শতাংশ। শহরের আকাশ ৮৯ শতাংশ মেঘে ঢাকা। তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও গুমোট ভাবের জন্য অনুভব হচ্ছে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার গড়ে ১৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হিসেবে হাওয়া বইছে। সন্ধ্যার পর থেকেই হাওয়ার গতিবেগ বাড়বে।
এখন পর্যন্ত সূত্র অনুযায়ী, ওড়িশা রাজ্যের পুরীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। সেটি ক্রমে অগ্রসর হচ্ছে। ওই রাজ্যের প্রশাসনের তরফে পর্যটকদের আগেই পুরী ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খালি করা হয়েছে উপকূলের হোটেল এবং রিসোর্টগুলো। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুর নাগাদ পুরীতে আছড়ে পড়বে ‘ফণী’। সেই মুহূর্তে ঝড়ের গতি হতে পারে ২০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হবে ওড়িশার সবক’টি জেলায়। তবে ওই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলায় বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে ‘ফণী’ আঘাত করতে পারে এমন অঞ্চলগুলোতে চলাচল করা জে ১০৩টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে পশ্চিমবঙ্গের ৩২টি ট্রেন।
রেলের তরফে বলা হয়েছে, দুর্যোগের আশঙ্কায় বাতিল ট্রেনের টিকিটের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে যাত্রীদের। তবে ‘ফণী’ মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গসহ বাকি দু’টি রাজ্যেও প্রস্তুতি চলছে পুরোদম। রাজ্য সরকারগুলোও প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে। ‘ফণী’ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধারণা না থাকলেও কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে ‘ফণী’র প্রভাব, সেই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত তিন রাজ্যসহ ভারত সরকার।
Facebook Comments