মেদিনীপুরে নারীশিক্ষা প্রসারের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের হীরক-জয়ন্তী বর্ষে পদার্পণ উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হল শুক্রবার। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করেন দক্ষিণেশ্বর শ্রী শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের প্রব্রাজিকা নির্বেদপ্রাণা। পাশাপাশি ৬০টি প্রদীপ প্রজ্বলন করেন বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি সেক্ পাঞ্জাব আলি। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিদ্যাসাগর, প্রতিষ্ঠাতা জগদীশ চন্দ্র দাশ ও বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর কুমার শীল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ্ সুদিন চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হীরক জয়ন্তী উৎসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি প্রসূন কুমার পড়িয়া। প্রধান শিক্ষিকা তাঁর ভাষণে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন। শিক্ষাবিদ্ সুদিন চট্টোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে নারী শিক্ষার প্রসারে ও নারী মুক্তির ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলন তথা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মেদিনীপুরের গৌরবময় অতীতের কথা বিশেষ ভাবে স্মরণ করিয়ে দেন। প্রব্রাজিকা নির্বেদপ্রাণা তাঁর বক্তব্যে ছাত্রীদের সব কাজের ক্ষেত্রে মনোসংযোগ গুরুত্বের কথা বিশেষ ভাবে স্মরণ করিয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, যেকোনও কাজে এগোতে গেলে আগে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। তিনি ছাত্রীদের বিভিন্ন মহামানব ও মহামানবীদের জীবনী পাঠ ও অনুশীলনের উপর গুরুত্ব দেন। ডি আই অমর কুমার শীল তাঁর বক্তব্যে বিদ্যালয়ের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন। বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী বর্ষ স্মারক পত্রিকা “নবারূণ” প্রকাশ করেন শিক্ষাবিদ্ সুদিন চট্টোপাধ্যায়। সবাইকে ধন্যবাদ জানান পরিচালন সমিতির সভাপতি সেক্ পাঞ্জাব আলি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হয়। অংশ নেন ভগবতী শিশু শিক্ষায়তনের ছাত্রছাত্রীরা, বিদ্যালয়ের ছাত্রী, প্রাক্তনী ও শিক্ষিকারা। রবীন্দ্রকাহিনীর তিন কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা ও রক্ত করবী নন্দিনী অবলম্বনে পরিবেশিত “তিন কন্যা” উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করে নেয়। প্রাক্তনী পরিবেশিত নটরাজ নৃত্যনাট্যও ছিল নজরকাড়া। বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের পরিবেশিত সঙ্গীত ও গীতি-আলেখ্য অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। অনুষ্ঠানটি সুচারু রূপে সঞ্চালনা করেন শিক্ষিকা সুতপা বসু। শুক্রবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ্ হরিপদ মন্ডল, চিকিৎসক হৃষীকেশ দে, অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ সেন, সমাজকর্মী রোশেনারা খাঁন, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নন্দিতা দাস মহাপাত্র, সমাজসেবী প্রসেনজিৎ সাহা, আইনজীবী অলোক কুমার দাস, চপল ভট্টাচার্য, সুচাঁদ কুমার পান, নির্মলেন্দু দে, অরূপ কুমার ভূঁঞ্যা, পিন্টু সামন্ত, মধুসূদন গাঁতাইত, নিমাই চন্দ্র খাঁড়া, রণজিৎ দাশ, অরুণ প্রতিহার, গৌরী প্রতিহার, শান্তনু চক্রবর্তী, আনন্দগোপাল মাইতি সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীবৃন্দ।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের তরফে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মেদিনীপুর শহর পরিক্রমা করে। মশাল প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রার সূচনা করেন মেদিনীপুর ভারত সেবাশ্রমের শ্রীমৎ স্বামী মিলনানন্দজী মহারাজ। সহস্রাধিক ছাত্রী, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবক-অভিভাবিকা, প্রাক্তন ছাত্রী ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ এই প্রভাত ফেরিতে অংশ নেন।
ছবি সৌজন্যেঃ সুদীপ কুমার খাঁড়া
Facebook Comments