২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন। গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে জমা পড়া সংযোজন, সংশোধন ও বিয়োজন সংক্রান্ত আবেদনের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়। ভোটার তালিকার যাবতীয় সংশোধনীর কাজ শেষ হওয়ার পর শুক্রবার চূড়ান্ত তালিকা পেশ করল কমিশন। নতুন তালিকা অনুযায়ী, রাজ্যে এখন মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৩২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯৮০। ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে ২০ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৯৩। সংশোধিত তালিকায় পুরুষ ভোটার ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩০৬ এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৯ লক্ষ ২৭ হাজার ৮৪, পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ৭৯০ জন।
এ বার চূড়ান্ত তালিকায় দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন জেলায় ভোটারের সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এই ভোটারদের একটা বড়ো অংশ অভিবাসী শ্রমিক। করোনা লকডাউনের জেরে তাঁরা ভিন রাজ্য থেকে নিজের বাসস্থানে ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া নতুন ভোটারও রয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। বুধবার রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন এবং জেলা শাসকদের সঙ্গে বৈঠক করার পর বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ভোটের সময় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ করোনা কালে বয়স্কদের জন্য বাড়িতে পোস্টাল ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন। বৈঠকে ছিলেন আয়কর, শুল্ক দফতরের অফিসাররাও। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, করোনা কালে বয়স্কদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে ৮০ বছরের বেশি বয়স্ক ভোটারদের বাড়িতে পোস্টাল ব্যালট পৌঁছে দেওয়া হতে পারে। তা ছাড়াও যাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে শারীরিক ভাবে অক্ষম, তাঁরাও এমন সুবিধা পেতে পারেন। কমিশনে আবেদন করে ফর্ম পূরণ করলে বাড়িতে পোস্টাল ব্যালট পৌঁছে যাবে। আবার ভোটকর্মীরাই সেই ব্যালট নিয়ে আসবেন। গোটা বিষয়টি ভিডিওগ্রাফি করা হবে, যাতে রাস্তায় কোনও ভাবে ওই ব্যক্তির ভোট নিয়ে কোনো কারিকুরি না হয়।
মধ্য কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেল বুধবার দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সুদীপ জৈন। বৈঠকের সময় তিনি জানতে চান, আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্তদের কী অবস্থা? স্কুল বাড়িগুলি সারানো হয়েছে কি না? মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার সময়সূচি সহ একাধিক বিষয়। ভোটের সময় কালোটাকা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনাও করা হয়।
১৮-২২ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যে আসার কথা নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের। তার আগে দু’দিনের সফরে উপ নির্বাচন কমিশনার সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে আজ দিল্লি ফিরে যান। জানানো হয়েছে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারে বুথ প্রতি ভোটারের সংখ্যা কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এ বার ভোটে প্রতি বুথ কেন্দ্রে এক হাজারের বেশি ভোটারকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে আরও ২৮ হাজার বুথের সংখ্যা বাড়তে পারে। ভোটার তালিকা সংশোধন, নাম সংযোজন এবং বিয়োজনের কাজ হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কার্যালয় সূত্রে খবর, রাজ্যে ৭৮ হাজার ৯০৩টি বুথ রয়েছে। মোট ভোটার ৭ কোটি ১৮ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩০৮ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ ২ হাজার ৫৯০। মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৫ হাজার ২৮৮। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১ হাজার ৪৩০ জন। শুক্রবার নতুন প্রকাশিত তালিকায় এই তথ্যের কিছু অদল বদল হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর।
Facebook Comments