তীব্র খরায় গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের হোয়াঙ্গে ন্যাশনাল পার্কের অন্তত ২০০ হাতির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও দেশটির অন্য পার্কেও খরার প্রভাব পড়েছে। জিরাফ, মহিষ ও হরিণসহ অন্য অনেক প্রাণী খরায় মারা যাচ্ছে। জিম্বাবুয়ে পার্ক ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র তানাশে ফারাও বলেন, বৃষ্টি না হলে এ অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, তীব্র খরায় প্রায় সব প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টহল দেওয়ার সময় হাতিগুলোকে সহজে চোখে পড়ে। কিন্তু কয়েক প্রজাতির পাখিরও গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। কিছু পাখি কেবল নির্দিষ্ট উচ্চতার গাছেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু হাতিগুলোর কারণে অনেক গাছ ভেঙে পড়ে গেছে।
খাবার ও জলের খোঁজে অনেক প্রাণী, বিশেষ করে হাতি লোকালয়ে চলে যায়। কখনো কখনো ওরা স্থানীয়দের আক্রমণ করে বসে। তখন আত্মরক্ষার্থে স্থানীয়রা পাল্টা আক্রমণ করে। এভাবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া, খরায় খাদ্যশস্যেরও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জিম্বাবুয়ের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষের খাদ্য সহায়তা দরকার।
৬০০’ হাতি, দুই প্রজাতির সিংহ ও অন্য কয়েকটি প্রাণীকে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত সেভ ভ্যালি কনজারভেন্সি থেকে কম সংখ্যক প্রাণী আছে এমন পার্কে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
একদল বন্য কুকুর, ৫০টি মহিষ, ৪০টি জিরাফ এবং দুই হাজার হরিণকেও অন্য জায়গায় নেওয়া হবে।
তানাশে ফারাও বলেন, এতোসংখ্যক বন্যপ্রাণী একসঙ্গে স্থানান্তর করার ঘটনা ইতিহাসে এই প্রথম। অল্প নয়, এক হাজার কিলোমিটার দূরে নেওয়ার কথা বলছি।
এখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি প্রাণী হয়ে গেছে। প্রাণীগুলোর সংখ্যার দিকে খেয়াল না রাখলে, একসময় যে পরিবেশের ওপর ওরা নির্ভর করতো, সেই পরিবেশেরই হুমকি হয়ে ওঠবে। জিম্বাবুয়েতে আনুমানিক ৮৫০০০ হাতি রয়েছে, যা সংখ্যার দিক থেকে প্রতিবেশ দেশ বতসোয়ানার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম।
বর্তমানে প্রাণীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে ৪০ মিলিয়ন ডলার দরকার, কিন্তু তার মাত্র অর্ধেক জোগাড় হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি কোনো বরাদ্দও নেই।
বন্য হাতির সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায়, তাদের সংরক্ষণে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত ১০১ হাতিকে চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্য দেশে বিক্রি করা হয়েছে। এতে দুই মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অর্থ আয় হয়েছে, যা দেশের অন্য প্রাণীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরও কিছু হাতি বিক্রি করে দিলে অন্য হাতিগুলোর জন্য খাবার জোগাড় করা যেতো। কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীরা সবসময় এর বিরোধিতা করে আসছে।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments