বার্মিংহামে বাঁচা-মরার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত গর্জে উঠলেন ব্যাটসম্যানরা। প্রাক্তনদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো জনি বেয়ারস্টো করলেন সেঞ্চুরি। চোট কাটিয়ে ফিরে জেসন রয়ের ফিফটি। আর ছন্দে থাকা বেন স্টোকসের ৭৯তে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৩৩৭ রান। ১৬০ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও ৩৭০-৩৮০ করতে না পারাটা অবশ্য হতাশার এউইন মরগানের দলের। তাতে কী? বিরাট কোহলির ভারতকে ৩১ রানে হারিয়ে হঠাৎ শঙ্কায় পড়া সেমিফাইনালের সম্ভাবনটা আবারও উজ্জ্বল করে তুলেছে এউইন মরগানের দল। ইংল্যান্ডের রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে ৯ বলে কোনো রান না করা লোকেশ রাহুলের রিটার্ন ক্যাচ নেন মার্ক উড। জোফ্রা আরচারের বলে ৪ রানে থাকা রোহিত শর্মার ক্যাচ দ্বিতীয় স্লিপে ফেলেন জো রুট। নইলে ভারতের দুর্দশা বাড়তে পারত আরো। তবে এই ক্যাচ মিসের মাশুলটা ভালোই গুনতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। চার রানে পাওয়া জীবনটা কাজে লাগিয়ে শতরান করেই যেথেমেছেন রোহিত। শেষ পর্যন্ত ১০৯ বলে ১৫ বাউন্ডারিতে ১০২ রান করেছেন এই ওপেনার। এবারের আসরে এটা রোহিতের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের ভাগ্য ভালো রোহিতের ওই সেঞ্চুরির পরও ম্যাচটা হারেনি তারা।
বার্মিংহামের উইকেট দেখে শচীন টেন্ডুলকার বলছিলেন, ‘এখানে বল শুধু উড়বে’। মোহাম্মদ সামির দ্বিতীয় বলই বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে জেসন রয় বোঝান, রানেরই উইকেট এটি। তাঁর ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় ছিল না চোটের জন্য খেলতে পারেননি তিনটি ম্যাচ। অন্য প্রান্তে জনি বেয়ারস্টো যেন নেমেছিলেন সাবেক তারকাদের জবাব দিতে। তবে শুরুতে উইকেট হারাতে চায়নি ইংল্যান্ড। এ জন্য প্রথম ১০ ওভারে রান শুধু ৪৭। পরের ৫ ওভারেই দুই ওপেনারের যোগদান ৫০! ২২ ওভারে দুজন গড়েন ১৬০ রানের জুটি। এই বিশ্বকাপে উদ্বোধনী জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ। তবে ২১ রানে ফিরতে পারতেন রয়। হার্দিক পাণ্ডের একটি বল তাঁর গ্লাভস ছুঁয়ে যায় উইকেটের পেছনে। পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার দেন ওয়াইড। মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে রিভিউ নেওয়া নিয়ে আলোচনা করেও পিছিয়ে আসেন বিরাট কোহলি! টিভি রিপ্লে দেখে কোহলির অভিব্যক্তিটা ছিল চুল ছেঁড়ার। জীবন পেয়ে পরের বলটিই ছক্কা মারেন রয়।
রয়কে ফিরিয়ে কুলদীপ যাদব শেষ পর্যন্ত ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। লং অন থেকে দৌড়ে ৫৭ বলে ৬৬ করা রয়ের অসাধারণ ডাইভিং ক্যাচটি নেন বদলি ফিল্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। অন্য প্রান্তে জনি বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি করেন ৯০ বলে। এরপর শূন্যে লাফিয়ে তাঁর উদ্যাপনে ঠিকরে বেরোচ্ছিল সাবেকদের সমালোচনার জবাব। এটি বিশ্বকাপে প্রথম ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর অষ্টম সেঞ্চুরি। ইনিংসটি অবশ্য বেশি বড় করতে পারেননি বেয়ারস্টো। ১০৯ বলে ১০ বাউন্ডারি ৬ ছক্কায় ১১১ করে মোহাম্মদ সামির বলে ডিপকভারে তালুবন্দি ঋষব পান্টের। বিজয় শঙ্করের বদলে গতকাল একাদশে সুযোগ পেয়েছেন এই তরুণ।
অধিনায়ক এউইন মরগান শুরু থেকে ছিলেন অস্বাচ্ছন্দ্য। ৯ বলে ১ করে সামির বলে কেদার যাদবকে ক্যাচ দেন তিনি। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে রানের স্রোতে বাঁধ পড়ে ইংল্যান্ডের। বেন স্টোকস ও জো রুট চতুর্থ উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়ে কাটান ধাক্কাটা। ৪৪ করা রুটকে ফিরিয়ে সেই মোহাম্মদ সামি ভাঙেন জুটিটা। জস বাটলারকেও ভয়ংকর হওয়ার আগে ফেরান সামি। ৮ বলে ২০ করেছিলেন তিনি। একটি প্রান্ত দৃঢ়তার সঙ্গে আগলে ছিলেন বেন স্টোকস। ৫৪ বলে তাঁর ৭৯ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ইংল্যান্ডের স্কোর পৌঁছে ৩৩৭-এ। ৬৯ রানে ৫ উইকেট সামির।
শুরুটা হতাশার হলেও রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ঋশভ পান্ট, হার্দিক পান্ডে, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের ব্যাটে দুর্দান্ত জবাব দিয়েছে ভারতও। দলীয় ৮ রানে লোকেশ রাহুল শূন্য রানে ফেরার পর রোহিত-কোহলির শতরানের জুটি। কোহলিকে ফিরিয়ে ১৩৬ রানের জুটিটা ভাঙেন লিয়াম প্লাংকেট। কেন জানি পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংসগুলোকে কোহলি শতরানে রূপ দিতে পারছেন না বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আউট হোন ৮২ রানে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে করেন ৭৭ রান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬৭ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭২। এ ধারাবাহিকতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬৬ রান করে প্লাংকেটের বোলিংয়ে জেমস ভিনসকে ক্যাচ দেন বিরাট কোহলি। এই আসরে এটা তাঁর পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি।
এরপর চতুর্থ উইকেটে ঋশভ পান্টের সঙ্গে ৫২ রান যোগ করে ফেরেন রোহিত। বড় ইনিংস খেলার জন্য জুড়িমেলা ভার রোহিতের। কিন্তু ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে ঠিক যেন হাত খুলে খেলতে পারেননি এদিন তিনি। শতরান করার পর তাঁকে ফিরিয়েছেন নতুন বলে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনে কাঁপন ধরানো ওকস।
ঋশভ পান্ট-হার্দিক পান্ডে-মহেন্দ্র সিং ধোনিরা অবশ্য শুরু থেকে চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন। কিন্তু ম্যাচটা বের করে আনতে পারেননি তাঁদের কেউ-ই। ২৯ বলে ৩২ রান করে প্লাংকেটের বোলিংয়ে ক্রিস ওকসের তালুবন্দি হোন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা পান্ট। আর ৩৩ বলে ৪৫ রান করে প্লাংকেটের বোলিংয়েই বদলি ফিল্ডার জেমস ভিনসের ক্যাচ হয়েছেন হার্দিক। আর সাবেক অধিনায়ক ধোনি ৩১ বলে অপরাজিত থাকেন ৪২ রান করে। তাঁদের এই ইনিংসগুলো ভারতের হারের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু। ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফল বোলার লিয়াম প্লাংকেট। ওকস নেন ২ উইকেট।
ছবি সংগৃহিত
Facebook Comments