সারা দেশে পুরীর রথযাত্রা বিখ্যাত হলেও আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও কিছু বিখ্যাত রথযাত্রা উত্সব আয়োজিত হয়ে থাকে। আজ আপনাদের জানাব বাংলার কিছু বিখ্যাত রথযাত্রা-
👉মাহেশ
পশ্চিমবঙ্গের প্রসিদ্ধ রথযাত্রার তালিকায় মাহেশের রথ যাত্রার নাম থাকবেই। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে ধ্রুবনন্দ ব্রহ্মচারী রথ উত্সবের সূচনা করেছিলেন এখানে। মাহেশের রথযাত্রার ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছর পুরনো। ১৩৯৬ সাল থেকে এখানে রথযাত্রা পালিত হয়। মাহেশের রথের ওজন ১২৫ টন এবং এই রথের উচ্চতা ৫০ ফুট। মাহেশের রথযাত্রার সময় বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। কথিত আছে যে, একদা মাহেশের রথের চূড়ায় এক নীলকন্ঠ পাখি এসে বসে। কিন্তু পুরীর রথযাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে উড়ে যায়। তার পরই মাহেশের রথের চাকা ঘোরে। এই সমস্ত ঘটনা শুধুমাত্র পুরোহিতই প্রত্যক্ষ করতে পারেন।
👉মায়াপুর
নদীয়া জেলার মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত রথ উত্সব। এখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রথে চড়ে আসেন। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী মায়াপুর ও তার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম ছিল রাজাপুর। রাজাপুর গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। প্রায় পাঁচশো বছর আগে এক পুরোহিত স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নটি হল, রাজাপুর থেকে মায়াপুরে প্রস্থান করবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। তার পর সেখান থেকে রথে চড়ে ফিরে আসবেন তাঁরা। এই প্রথা মতোই প্রতিবছর মায়াপুর ও রাজাপুর গ্রামে রথ উত্সব পালিত হয়ে আসছে।
👉গুপ্তিপাড়া
১৭৪০ সালে গুপ্তিপাড়ায় এই রথ উত্সবের সূচনা করেন মধুসূদানন্দ। এখানে রথযাত্রার দিনে ৪০ কুইন্টাল খাবার লুটিয়ে দেওয়া হয়। বহুকাল ধরে জনগণের উদ্দেশে খাবার লুটানোর প্রথাটি প্রচলিত রয়েছে। গুপ্তিপাড়ার এই রথের উচ্চতা ৩৬ ফুট। এই স্থানে শাক্ত ও বৈষ্ণব– উভয় ধর্মাবলম্বী মানুষই বসবাস করে। উল্লেখ্য, ১৮৭৩ সালের আগে গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবন চন্দ্র মন্দির থেকে ১২ চাকার রথ বের হত। গন্তব্য ছিল জগন্নাথের পিসির বাড়ি। কিন্তু ১৮৭৩ সালে একটি দুর্ঘটনার পর সেই রথের চাকার সংখ্যা ক্রমশ কমিয়ে আনা হয়েছে।
👉মহিষাদল
মাহেশের মতোই পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথযাত্রাও বিখ্যাত। এই রথযাত্রার ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। ১৭৭৬ সালে মহিষাদলের জমিদার আনন্দলালের স্ত্রী জানকী দেবী এখানে রথযাত্রার সূচনা করেন।
👉রাজবলহাট
হুগলির রাজবলহাট শুধু তাঁতের কাপড়ের জন্য নয়, বরং এখানকার রথযাত্রার জন্যও বিখ্যাত। রাজবলহাটের রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি থাকে না। এখানে রাধাকৃষ্ণ রথে সওয়ার হয়ে বের হন।
👉আমোদপুর
বর্ধমানের মেমারির আমোদপুরের রথযাত্রাও বেশ নামকরা। এই গ্রামের জমিদার পরিবারের দেবতা রাধামাধব। এখানে প্রতি বছর ধুমধাম করে রথ যাত্রার আয়োজন করে আমোদপুরের জমিদারবাড়ি। এই রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার পাশে রাধামাধবের মূর্তিও থাকে।
Facebook Comments