যদি প্রশ্ন করা হয় ভারতবর্ষের কোন রাজ্যে রমরমিয়ে চলে “পাইলট” নামে দু চাকার ট্যাক্সি, বা চলে পাঁচটি ভাষায় কপোথকথন কিংবা কিছুদিন আগে অবধি কোন রাজ্যের স্বীকৃত সরকারি ভাষা ছিল পর্তুগিজ অথবা প্রথম ছাপাখানা কোন রাজ্যে ছিল, অনেকেই হয়ত একটু হোঁচট খেয়ে যাবেন। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, কাজু, ফেনী, নারকেল, মাছ-ভাত আর বিচের জন্য বিখ্যাত কোন জায়গা, এক বাক্যে উত্তর আসবে গোয়া। এটা সত্যি যে, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পায়ের তলায় আরব সাগরের তীরে আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে ঠিক যে দিনটিতে মাত্র ২০টি জাহাজ আর ১২০০ সৈন্য নিয়ে আলফানসোডি আলবুকার্ক যুদ্ধে আদিলশাহীদের হারিয়ে গোয়া দখল করেন ঠিক সেইদিন থেকেই সমুদ্রে ঘেরা এই জায়গাতে ঢুকে পড়ে পর্তুগিজ উপনিবেশের বীজ। পর্তুগিজ, ডাচ, ফ্রেঞ্চ বা ব্রিটিশদের বরাবরই এই মশলানগরী গোয়া ছিল তাদের নজরদারিতে, আর এই মশলার বাণিজ্যের সাথে সাথে গোয়ানিজ রান্নাঘরে বা রেস্তোরাঁতে ঢুকে পড়ে গোয়ানিজ মশলার অনবদ্য ছোঁয়া। তাই গোয়া বেড়াতে গিয়ে গোয়ানিজ মশলাদার খাবারের সাথে জিভের পরিচয় না করানোটা চরম বোকামির পরিচয়। মশলার আধিক্য আর রমরমার জন্য গোয়ানিজ খাবারে মেলে মশলার আধিক্য, সে রাইস এন্ড ফিস কারী হোক বা ক্র্যাব কারি। রয়েছে মাশরুম বা ম্যাকরেল হট এন্ড স্পাইস গোয়ান কারিও। কিন্তু সবথেকে জিভে জল আনা আর বিখ্যাত গোয়ানিজ ডিশের নাম হল মাটন ভিন্দালু। যার স্বাদ না নিয়ে গোয়া ভ্রমণটাই অনেকাংশ পানসে হয়ে যায়। এ রান্নার জন্য চাই ছোট করে কাটা খাসির মাংস আর আলু, গোয়ান মশলা হিসাবে কাশ্মীরি মির্চ, গোলমরিচ, জিরেগুঁড়ো, হলুদগুঁড়ো, সর্ষে আর নুন। এছাড়া পিঁয়াজ, আদা আর রসুন সাথে ভিনিগার। কড়াই এ ঢালা খাঁটি সর্ষের তেল গরম হলে তাতে দিতে হবে আগে থেকে করে রাখা পিয়াজের পেষ্ট। তার আগে দিতে আর একটি পেষ্ট বানাতে হবে সমস্ত মশলা আর ভিনিগার মিশিয়ে। পিঁয়াজের পেষ্ট বাদামি রঙ নিয়ে নিলে তাতে দিতে হবে দ্বিতীয় পেষ্টটি। কষানো চলতে থাকবে যতক্ষন না মশলা মাখামাখা হয়ে তেল ছাড়ে। এরপর ধোঁয়া ওঠা মিক্সিংয়ে ছাড়তে হবে টুকরো করে রাখা মাংস আর আলু। মশলা আর মাংস মিশে গেলে আন্দাজ মত নুন, পরিমাণ মত গরম জল দিয়ে সেদ্ধ হবার অপেক্ষা। মিশ্রণ, মাংস সহ মাখামাখা হয়ে গেলে তৈরী হল মটন ভিন্দালু, যা গোয়ার বিখ্যাত স্পাইস-কারি। রুটি বা ভাতে অসাধারণ, সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখতে মটন ভিন্দালুর স্বাদ নেওয়া মন্দ কি?
ছবি সৌজন্যে: বিপ্রনাথ মজুমদার, অভিজিৎ দে
Facebook Comments