রাজ্যের অগ্রণী শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বিদ্যাসাগর শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের দু’দিনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব শেষ হল রবিবার সন্ধ্যায়। শনিবার দু’দিনের এই বর্ণময় উৎসবের উদ্বোধন করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম প্রাক্তন অধ্যাপক কুমারেশ ঘোষ। সভায় স্বাগত ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি কলেজের পতাকা উত্তোলন করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড.বিশ্বজিৎ সেন। উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ড.সত্যশংকর গোস্বামী।উদ্বোধনী সভায় বক্তব্য রাখেন ডব্লিউবিইউটিটিইপিএ-এর কন্ট্রোলার ড.ডি পি নাগ চৌধুরী, প.ব.সরকারের জয়েন্ট ডিপিআই ড.রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ডিডিপিআই ড.সুজিত পাল, জেলা পরিকল্পনা পর্ষদের সহ সভাপতি প্রদ্যুৎ ঘোষ, ঝাড়গ্রাম বি এড্ কলেজের অধ্যক্ষ ড. আশীষ কুমার গুপ্ত প্রমুখ। ডব্লিউটিটিইপিএ-এর উপাচার্য সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সাফল্য কামনা করে একটি অডিও বার্তা পাঠান, সেটি সভায় শোনানো হয়। উদ্বোধনী সভায় উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান প্রণব বসু, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান দীনেন রায়, আইনজীবী শ্যামলেন্দু মাইতি, মৃণাল কান্তি চৌধুরী, ধীরেন্দ্রনাথ বাগ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মূল অনুষ্ঠানের আগে শনিবার সকালে একটি বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরী মেদিনীপুর শহর পরিক্রমা করে। প্রভাত ফেরীতে সঙ্গীতশিল্পী জয়ন্ত সাহা, প্রসেনজিৎ সাহা, মদন মোহন মাইতি, অনয় মাইতি, অজয় পাহাড়ী, সুব্রত খাঁড়া, স্বদেশ পান সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা, শিক্ষক-শিক্ষিকা -শিক্ষাকর্মীগণ যোগ দেন। প্রকাশিত হয় সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের স্মারক পত্রিকা সুবর্ণ পদক্ষেপ। বিকেলে ‘শিক্ষক বিদ্যাসাগর’ এই শিরোনাম যুক্ত বিষয়ে আলোচনা করেন কলিঙ্গ কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ড.আশীষ খাস্তগীর। “বিজ্ঞান সংস্কৃতি” বিষয়ে আলোচনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড.শ্যামল চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাতুয়ার মল্লিক, ঝুমঝুমি চক্রবর্তী, প্রলয় বিশ্বাস, অসীমা জানা প্রমুখ। রবীন্দ্র ভাবনার নির্ভর একটি মনোজ্ঞ আলেখ্য উপস্থাপন করেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। এই আলেখ্যে নেতৃত্ব দেন প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়। অধ্যাপক কল্যান রায়ের পরিচালনায় কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা পরিবেশন করে মজার নাটক ‘ভূষুন্ডির মাঠ’। উদ্বোধনীে বক্তব্যে অধ্যাপক কুমারেশ ঘোষ কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেন। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে মজবুত করার উপরে আলোকপাত করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালের ১জুলাই কমার্স কলেজের বিল্ডিংয়ে পথচলা শুরু করেছিল বিদ্যাসাগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। উদ্বোধন করেছিলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.সত্যেন্দ্রনাথ সেন। কলেজ প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা নেন শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র দাস, অধ্যাপক কুমারেশ ঘোষ, অধ্যাপক শ্রীপতি দে, অধ্যাপক অনুতোষ চক্রবর্তী প্রমুখ বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ।
রবিবার সকালে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব মঞ্চে বিশেষ বক্তব্য রাখেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপিকা মধুমালা সেনগুপ্ত এবং ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজ। উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী রোশেনারা খাঁন, প্রাক্তন বিশিষ্ট অধ্যাপিকা অন্নপূর্ণা চট্টোপাধ্যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ সেন পরিচালন সমিতির সভাপতি সত্যশংকর গোস্বামী, সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধক প্রাক্তন অধ্যাপক কুমারেশ ঘোষ, অশোক কুমার দাস প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ। রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় প্রাক্তনী পূনর্মিলন উৎসব। আবৃত্তি, সঙ্গীত, স্মৃতিচারণে অংশ নেন প্রবীণ-নবীন প্রাক্তনীরা। বিকেলে সংবর্ধনা জানানো হয় কলেজের কৃতী প্রাক্তনীদের। পাশাপাশি এই কলেজ থেকে ট্রেনিরা যে বিদ্যালয়ে প্র্যাকটিস টিচিংয়ে আগে যেতেন বা বর্তমানে যান, সেইসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মাননা জানানো হয়। প্রাক্তনীদের তরফে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রসূন কুমার পড়িয়া ও সুদীপ কুমার খাঁড়া। বৈকালিক পর্বের সভায় বক্তব্য রাখেন কলেজের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ সেন, সুব্রত পুরকাইত, মনোরঞ্জন ভৌমিক, সুজিত সামন্ত, রুদ্রেশ্বর মিশ্র প্রমুখ। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে ‘ষড়ঙ্গ’। অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে সঙ্গীত পরিবেশন করে সবার মন জয় করে নেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী অমৃতা দত্ত।
ছবি সৌজন্যেঃ সুদীপ কুমার খাঁড়া
Facebook Comments