আন্তর্জাতিক বাজারে গম রফতানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। তবে যেসব দেশ খাদ্য সংকটে ভুগছে, সেসব দেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া যেসব দেশে এর আগে গম পাঠানোর চুক্তি হয়েছিল ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির, তারাও তাদের আগের চুক্তি অনুযায়ী গম পাঠাতে পারবেন। সেই হিসেবে আগামী জুলাই পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন রফতানি করতে পারবেন দেশটির রফতানিকারকরা।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্যসচিব বি. ভি. আর সুব্রাহমানিয়াম রবিবার সংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। শনিবার আন্তর্জাতিক বাজারে গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এক বিবৃতিতে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) পক্ষ থেকে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
গম উৎপাদনে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে আছে চীন, তারপরই ভারতের অবস্থান। তবে উৎপাদনে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে থাকলেও গম রফতানিতে বেশ পিছিয়ে আছে দেশটি, এবং তার প্রধান কারণ অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর তাই রফতানি করার জন্য গম তেমন অবশিষ্ট থাকে না ভারতের। বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা প্রতিবেশী এই তিনটি রাষ্ট্রেই মূলত গম রফতানি করে ভারত।
আন্তর্জাতিক বাজারে গম রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন, কিন্তু এ দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় কৃষ্ণ সাগর অঞ্চল থেকে গমের চালান আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই চলছে এ অবস্থা। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লম্ফণ ঘটেছে গমের দামে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে গমের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে, কৃষ্ণ সাগর থেকে গমের সরবরাহে উন্নতি না ঘটা ও বৈশ্বিকভাবে দাম বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দিক থেকে চাপ বাড়ছে ভারতের ওপর।
কিন্তু আবহাওয়াগত কারণে বিগত বিভিন্ন বছরের তুলনায় চলতি বছর দেশটিতে গম উৎপাদনে রীতিমতো ধস নেমেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব। সাংবাদকিদের তিনি বলেন, গত বছর ১০৬ মিলিয়ন টন গম উৎপাদন করেছিল ভারত; কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা ও তাপপ্রবাহের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতে গমের ফলন। গত বছর যেখানে ভারতে উৎপাদিত গমের পরিমাণ ছিল ১০৬ মিলিয়্ন টন, সেখানে চলতি বছর এখন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৩ মিলিয়ন টন গম। পাশাপাশি, বিপজ্জনক হারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে ভারতে। এপ্রিল মাসে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
Facebook Comments